মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

রাজধানীতে কঠোর নজরদারি পুলিশের

খবরপত্র অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০২০

রাজধানীর ঢাকায় আসা ও ঢাকা ছাড়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। ঢাকায় কেউ আসতে পারবে না, ঢাকা কেউ ছাড়তেও পারবে না গতকাল এমন ঘোষণা ছিল পুলিশ হাইকমান্ডের। আর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। উপযুক্ত কারণ ছাড়া কেউ রাজধানী ঢাকায় আসতে পারছেন না আবার কেউ ঢাকা ত্যাগ করতে পারছেন না। অহেতুক আসা-যাওয়া বন্ধে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ।

অনাকাঙিক্ষত আনাগোনা ঠেকাতে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়েছে। কেউ ঢাকায় আসতে চাইলে কিংবা ঢাকা ছাড়তে চাইলে তাকে পুলিশের কাছে কৈফিয়তের মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে। জানাতে হচ্ছে পুলিশকে উপযুক্ত কারণ। অন্যথায় গন্তব্যে রওয়ানাকারীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর বাবু বাজার ব্রিজ, পোস্তগোলা সেতু, যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড এলাকা, ডেমরা সড়ক, আব্দুল্লাহপুর, তুরাগ কামারপাড়া, তিনশ ফিট মহাসড়ক, গাবতলী এবং বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড বসায়।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, আইজিপির নির্দেশনা পালনের জন্য ডিএমপি কমিশনার প্রত্যেককে মাঠে থাকতে বলেছেন। ডিএমপির সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে। শুধু প্রবেশ পথেই নয় রাজধানীর সব সড়কেই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। সেখানে তল্লাশি করা হচ্ছে। অযথা কেউ বের হলে মোকাবিলা করা হচ্ছে।

গাবতলীতে দেখা যায়, আমিনবাজার সেতুর প্রবেশ মুখেই ব্যারিকেড বসিয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যারিকেড পার হয়ে কোনো ব্যক্তি বা গাড়ি আসতেও পারছে না, যেতেও পারছে না। সবাইকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেউ অফিস খোলার কথা বলছেন, কেউ ব্যাংকে যাবেন আবার কেউ বা হাসপাতালে যাবেন। তবে কোনো যুক্তিই মানছেন না। কেবলমাত্র তারাই ঢুকতে বা বের হতে পারছেন যারা কাঁচামাল নিয়ে এসেছেন। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, মিডিয়াকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ডকুমেন্টস দেখিয়ে ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে পারছেন।

গাবতলীতে কর্তব্যরত দারুস সালাম থানার এএসআই আব্দুল হালিম বলেন, ‘কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। এসব করেও লাভ নেই। অনেকের গাড়ির কাগজ না থাকায় মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

ফারুক হোসেন নামে এক ব্যক্তি গতকাল রাতে গিয়েছিলেন সাভারে। তার বাসা ফার্মগেটে। আজ তিনি ড্রাইভারসহ ফিরছিলেন প্রাইভেট কারে। গাবতলীতে তাকে আটকে দেয় পুলিশ। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তিনি ফেরত যান।

পোস্তগোলা ব্রিজের গোড়ায় ট্রাক, প্রাইভেটকার আর মোটরসাইকেলের বিশাল বড় জট। কারণ পুলিশ আটকে দিয়েছে। কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও পার হতে পারছেন না। ওইসব অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর পরিবর্তে সাধারণ লোকদের বহন করা হয়েছে, যার কারণে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সগুলোও পার হতে দেয়নি। পায়ে হেঁটে কিছু লোক কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করে, তাও সফল হতে দেয়নি পুলিশ।

পোস্তগোলা ব্রিজের কাছে ধারে দায়িত্বরত শ্যামপুর থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, এতকিছু বলার পরেও মানুষের গায়ে লাগছে না। এ জন্য পুলিশকে কঠোর হতে হচ্ছে। তাছাড়া আইজিপির নির্দেশনা আছে কাউকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া যাবে না। আমরা শুধু নির্দেশনাটুকু পালন করছি। অনেকে পুরনো প্রেসক্রিপসন দেখিয়ে ঢাকায় ঢুকতে চেয়েছে, আমরা ফেরত পাঠিয়েছি। কিছু করার নেই। করোনা ভাইরাস সবার জন্যই ঝুঁকিপুর্ণ এরপরেও কিছু লোক বাড়াবাড়ি করছে।

চিটাগাং রোড সাইনবোর্ড এলাকার বর্ণনা দিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম কাজল বলেন, সাইনবোর্ড এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত ছয়টি ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। শুধুমাত্র সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি ও ব্যক্তি এর আওতামুক্ত থাকবে। একই অবস্থা সিলেট ডেমরা সড়কেও করা হয়েছে।

ভাটারা থানার এসআই হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাইরে লোকের প্রবেশ ঠেকাতে বসুন্ধরা তিনশ ফিট মহাসড়কেও ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। তল্লাশি করা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখালে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে নইলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

আব্দুল্লাহপুর টঙ্গী ব্রিজের গোড়ায় বেরিকেড বসিয়েছে উত্তরা পুলিশ। খাবারের গাড়ি, কাঁচামালের ট্রাক ও ওষুধের গাড়ি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ।

উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমাদের এক জায়গায় সম্মত হতে হবে। তা হলো সবাইকে ঘরে থাকা। যেহেতু সেটি অনেকেই করছে না, এখন বাধ্য হয়ে পুলিশ সবাইকে ঘরে রাখতে হচ্ছে। তাই এ ব্যবস্থা। এখন আর কেউ অযথা বের হবে না আজকের পর। আগামীকাল থেকে আরও বেশি কঠোর হবে পুলিশ।’

একই অবস্থা দেখা গেছে, ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ের ধলেশ্বরী ব্রিজ এলাকায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দিয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা কাউকে ঢাকার দিকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অনেক মিডিয়ার গাড়িও আটকা পড়েছিল সেখানে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে মিডিয়ার গাড়ি ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বলেন, আমরা শুধু আইজিপির নির্দেশনা পালন করছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

একই অবস্থা দেখা গেছে মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। পুলিশ সেখানে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি বসিয়েছে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পিবিআইয়ের এসআই রাবিউল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকরা যাতে ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে না পারেন, কেউ যাতে আরিচাঘাট হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com