তিন জেলা প্রকল্প (রাজবাড়ী-মাদারীপুর-শরীয়তপুর) এর আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারী অর্থায়নে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের চর কোয়ারপুর কীর্তিনাশা নদীর ওপর ৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ব্রীজ নির্মাণে ব্যায় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯২৩ টাকা। ঠিকাদার সেতু নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। সেতুর গার্ডার ও স্ল্যাবের সেন্টারিং কাজে লোহার পাইপের পরিবর্তে বাশঁ ও গাছের খুঁটির বল্লি এবং স্টিলের পরিবর্তে কাঠের সাটারিং করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটলে সেতু নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিনের জন্য পিছিয়ে পড়ার আশংকা করছেন তারা। এছাড়া অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ এবং সেতুর দুই পাড়ের জমি অধিগ্রহণ না করে মানুষের জমি দখল ও বসতবাড়ি ভাঙ্গার পায়তারা চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদারীপুরের ঠিকাদার হাবিবুর রহমান অকুর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হামিম ইন্টারন্যাশনাল এর নামে সেতু নির্মাণ কাজ করছেন জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সাব ঠিকাদার মাসুদ ঘরামি। ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ব্রীজ নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে কাজের মেয়াদকাল শেষ করার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত চার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদার। এখনও সেতুর পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কাজ বাকি রয়েছে। রুহুল আমিন মুন্সি, সুমন ঢালী, ইব্রাহিম ঢালী, মোহাম্মদ সরদার, আনোয়ার শেখ ও ডা. গিয়াসউদ্দিন চৌকিদারের বাড়ি সেতুর গোড়ায়। তারা জানান, সেতুর সংযোগ সড়ক বিআরএস রেকর্ডে আছে ২৪ ফুট। কিন্তু সেতুর প্রস্থ ফুট। সেতুর সমান সড়ক নির্মাণ হলে দুই পাশের লোকজনের বসতবাড়ি ও জমি সড়কে চলে যাবে। কিন্তু এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদার বলছে এলজিইডির কাজে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন সিস্টেম নাই। এছাড়া সেতু নির্মানেও অনিয়ম করা হচ্ছে। সেতুর গার্ডার ও স্ল্যাব ঢালাই কাজে লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং/সেন্টারিং না করে বল্লি ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে বল্লি দিয়ে সেন্টারিং এবং কাঠ দিয়ে সাটারিং এর কাজ চালিয়ে গেলেও এলজিইডির দায়িত্বশীল কোন প্রকৌশলী বাঁধা নিষেধ করেননি। নি¤œমানের এসব বল্লি ও কাঠের পরিবর্তে লোহার পাইপ ব্যবহার করে স্টিল সাটার স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না ঠিকাদার। প্রকৌশলীদের সাথে যোগসাজশ ছাড়া ঠিকাদার কোন মতেই এ ধরনের অনিয়ম করতে পারেনা বলে ধারনা এলাকাবাসীর। এছাড়া স্থানীয়দের জমি অধিগ্রহণ না করে সেতুর দুই পাড়ের মানুষের বাড়িঘর ও জমির ওপর দিয়ে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে এলজিইডি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এখন সুর পাল্টিয়ে বলছেন বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং/সেন্টারিং করা যাবেনা। অথচ তার চোখের সামনেই দীর্ঘদিন ধরে বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং/সেন্টারিং এর কাজ চালিয়ে গেলেও তিনি কোন নিষেধ করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স হামিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীরা হাবিবুর রহমান অকু বলেন,এই সেতুর কাজ আমি করছিনা। আমার প্রতিষ্ঠানের নামে গোসাইরহাটের মাসুদ ঘরামি কাজটি করছেন। কাজে কোন সমস্যা হলে তার দায়ভার সে নেবে। এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য সাব ঠিকাদার মাসুদ ঘরামির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও সে তার ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার বলেন, বল্লি ও কাঠ দিয়ে সেতুর গার্ডার ও স্ল্যাবের সেন্টারিং ও সাটারিং করার কোন নিয়ম নাই। বল্লি ও কাঠ দিয়ে সেন্টারিং/সাটারিং করার বিষয় জানতে পেরে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। বল্লি অপসারন করে লোহার পাইপ দিয়ে স্টিল সাটার করে কাজ করতে হবে। এছাড়া এলজিইডির কাজে জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিস্টেম নাই। এ বিষয়ে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান ফরাজি বলেন, লোহার পাইপ ও স্টিলের পরিবর্তে বল্লি ও কাঠ দিয়ে সেন্টারিং/সাটারিং করার কোন বিধান নাই। বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। আমরা দেখছি বিষয়টি কি করা যায়। আর জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন নিয়ম আমাদের ডিপার্টমেন্টে চালু নাই। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে আমরা বিষয়টি দেখবো।