মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে। প্রভাবশালী দলীয় নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে অনেকেই বনে গেছেন কোটি পতি অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে হুমকিতে পড়েছে ফসলি জমি ও বসত বাড়ি। মাটি বাহী ট্রাক্টর গাড়িতে বিলীনি হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। চলন্ত মাটিবাহী গাড়ির উরন্ত ধুলায় বিপর্যস্থ রাস্তার পাশে বাসিন্দারা। অভিযোগ করে কোন প্রতিকার মিলছে না বলে জানান এলাকা বাসি এবং বালু দশ্যুদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না স্থানীয়রা। বরাইদ ইউনিয়নে হামজা এলাকায় বালু বহনে অবৈধ মাহেন্দ্র ট্রাক্টর চলার সারিবদ্ধভাবে আনা-নেয়ার লম্বা লাইন দেখে যে কারো মনে হবে যেন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লীষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদী থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে বালু তোলে অবাধে বিক্রির ধুম পড়েছে। হাল চাষের ট্রাক্টরের সাথে অবৈধ ট্রলী যোগ করে বালু বহন করছে। এসব ট্রাক্টরের ৫ফুট উচ্চতার চাকার পেষনে ধংশ হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। আগসাভার এলাকায় হামজা মাঠ হয়ে প্রতিদিন শতশত গাড়ি বালু বিক্রি করছে বালু দস্যুরা। বালু উত্তোলনের কারণে নদীর বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অভিযোগ করেও কোনো ফল হচ্ছে না। বালু বিক্রির অবৈধ ব্যবসায় জড়িত আছে স্থানীয় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এদের দাপট এতই প্রবল যে, প্রশাসন ও ভূমি অফিস কিছুই করতে পারছে না। বাধা দেয়া হলে ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এলাকাবাসির অভিযোগ, উপজেলার অন্য প্রান্তে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হলেও আগ সাভার হামজা এলাকায় কোন আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না প্রশাসন। রহস্য জনক নিরবতায় আমরা হতাশ। দ্রুত উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাবাসি। এদিকে বড় বড় গর্ত হয়েছে আগসাভার হামজা মৌজায় মাঠ এলাকার সরকারি সড়ক গুলো। সারা দিনভর বালু বহন করায় সড়কগুলো ধসে ধূলায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয় উরন্ত ধুলায় বিপর্যস্থ হচ্ছে জন জীবন। ফলে হাঁচি কাশিসহ শ্বাস প্রশ্বাস জনিত নানা রুগে ভুগান্তি হলেও অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছেন স্থানীয়রা। রাস্তার দুপাশের বসত বাড়ির লোকজন প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। সরকার দলীয় নেতা সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, ইউপি সদস্য রমজান মিয়া, ডিএম রেজাউল করিম, নজরুল সহ বালু ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস ধরেই অবাধে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাটি বিক্রি করে আসছে। গোপাল পুর বাজারের পশ্চিম পাড়ে শতশত গাড়ি বালু বিক্রি করেছেন আ. মজিদ তালুকদার। বালু ব্যবসা অনেকটাই বিনা পুঁজিতে বিশাল লাভের ব্যবসা। বালু তোলো, ট্রাকে ভরো এবং বিক্রি করো, মোটা টাকা গুনো, এই হলো কারবার। প্রচলিত আইন অনুযায়ী খোলা নদীবক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন শাস্তি যোগ্য অপরাধ। বালু ব্যবসায়ীরা আইনকে অমান্য করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় আবাদী জমি, বসত বাড়ি রাস্তা বিপন্ন হওয়ার আশংকা পরিবেশবিদদের। তাদের মতে, এ কারণে ইতিপুর্বেও বহু আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, বালু বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই। ভুমি প্রশাসন চাইলে কঠোর ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা বলেন, আমাকে কেউ অবহিত করেননি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান চালিয়ে মেশিনপত্র জব্দসহ নিয়মিত মামলাও করি। অতিসত্তর বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।