শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

সাত বছরে বাস্তবায়ন হয়নি ঢাকায় ১২০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩

আয়তন ও জনঘনত্ব অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় যে পরিমাণ সড়ক প্রয়োজন, বাস্তবে রয়েছে তার তিন ভাগের এক ভাগেরও কম। এটি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে প্রণীত ২০ বছর মেয়াদি সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাকার সড়ক নেটওয়ার্কের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিদ্যমান সড়ক উন্নয়নের বিষয়গুলো। সে সময় পরিকল্পনা করা হয়, ২০১৫-৩৫ সালের মধ্যে ঢাকায় ৫৮৫ কিলোমিটার নতুন সড়ক তৈরি করা হবে। আরো ৬০৯ কিলোমিটার পুরনো সড়ক প্রশস্ত করে বাড়ানো হবে ধারণক্ষমতা। তবে ২০১৬ সালে আরএসটিপি কার্যকরের পর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ৪ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার।
আরএসটিপি কার্যকরের সাত বছর পর মাত্র ৪ কিলোমিটার সড়ক বাস্তবায়ন করাকে সরকারের বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঢাকায় পুরনো সড়কের উন্নয়ন আর নতুন সড়ক নির্মাণের কাজটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এবং সবার আগে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছিল। এমন কাজ ব্যর্থ হলে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ রকম চলতে থাকলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলোও উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে।
২০১৫-৩৫ সালের মধ্যে ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ১২৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক, তিনটি রিংরোডের মাধ্যমে ২০৮ কিলোমিটার নতুন সড়ক ও ৯৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন এবং ৭৬১ কিলোমিটার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি সড়ক নির্মাণ এবং উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল আরএসটিপিতে।
ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে শুধু বৃহত্তর ঢাকার জন্য দুটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে। এগুলো হলো ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে বৃহত্তর ঢাকায় আরো ৬৯ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলেও ঢাকার বাবুবাজার থেকে এই এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগটি এখনো চালু হয়নি।
আরএসটিপিতে বৃহত্তর ঢাকায় তিনটি রিংরোড নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ করা ইনার, মিডল ও আউটার রিংরোডের দৈর্ঘ্য ৩১০ কিলোমিটার। রিংরোডগুলোর জন্য নতুন সড়ক তৈরি করতে হবে ২০৮ কিলোমিটার। আর উন্নয়ন করতে হবে গতিপথে থাকা ৯৬ কিলোমিটার সড়কের। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত কেবল ইনার রিংরোডের ৪ কিলোমিটার অংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। ইনার রিংরোডের এ ৪ কিলোমিটার অংশ আবার আরএসটিপির পরিকল্পনার বাইরে তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এর বাইরে ঢাকার ২৯০ কিলোমিটার প্রাইমারি বা প্রধান সড়ক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয় আরএসটিপিতে। এর মধ্যে নতুন সড়কের পরিমাণ ৬৫ কিলোমিটার। জেলা শহরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত সেকেন্ডারি সড়ক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয় ৪৭১ কিলোমিটার, যার মধ্যে নতুন সড়কের পরিমাণ ১৮৫ কিলোমিটার।
আরএসটিপির মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা ও তা হালনাগাদের জন্য বর্তমানে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিটিসিএ। গতকাল ডিটিসিএ কার্যালয়ে প্রকল্পটির ওপর একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ইনার রিংরোডের ৪ কিলোমিটার ছাড়া সুপারিশকৃত ১ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার সড়কের আর কোনো অংশই বাস্তবায়ন হয়নি।
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ১ হাজার ১৯৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ চারটি ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছিল আরএসটিপিতে। এর মধ্যে ২০১৬-২০ মেয়াদের প্রথম ধাপে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ৩৮০ কিলোমিটার সড়ক। একইভাবে ২০২১-২৫ মেয়াদি দ্বিতীয় ধাপে ২৭৪ কিলোমিটার, ২০২৬-৩০ মেয়াদি তৃতীয় ধাপে ২৫৬ কিলোমিটার এবং ২০৩১-৩৫ মেয়াদি চতুর্থ বা শেষ ধাপে আরো ২৮৮ কিলোমিটার সড়ক সুপারিশ করা হয়।
আরএসটিপি কার্যকরের সাত বছর পর এসে যেখানে ৪০০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, সেখানে মাত্র ৪ কিলোমিটার সড়ক সম্পন্ন করাকে সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার সড়ক নেটওয়ার্কে অনেক দুর্বলতা আছে। এ কারণে প্রডাক্টিভিটি পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কগুলোর মিসিং লিংকগুলো তৈরি, নতুন কিছু সড়ক তৈরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উন্নয়ন কাজগুলো সবার আগে করা জরুরি ছিল। আরএসটিপিতে এসব কাজ ধাপে ধাপে করতে বলা হয়, কিন্তু সাত বছর পর এসে আমরা দেখছি মাত্র ৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার কারণে পরের ধাপগুলোও বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হবে। এমনকি ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকার মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিটের মতো বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে সেগুলোর উপযোগিতাও কমে আসবে।’
সরকারের ২০২০ বছর মেয়াদি সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা বা আরএসটিপি বাস্তবায়ন কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। বৃহত্তর ঢাকায় প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরএসটিপির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলছে। অন্যদিকে সুপারিশকৃত রিংরোডগুলোর গতিপথ নির্ধারণে কাজ চলমান। কাজেই আমরা যে আরএসটিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে, তা বলার সুযোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় নতুন সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আরএসটিপির যেসব সুপারিশ ছিল, সেগুলো ২০১৫ সালের আগের জরিপ অনুযায়ী করা, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যখন আমরা জরিপ, সমীক্ষার কাজ শুরু করি তখন কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সুপারিশকৃত সড়ক বা সড়ক অবকাঠামোর গতিপথে জটিলতা দেখা গেছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো সমন্বয় করে আমরা সার্বিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছি।’-বণিকবার্তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com