সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার আরো পরের দিকে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটন আদালতে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হবেন। ৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি আদালতে ফৌজদারি অভিযোগে আদালতে দাঁড়াচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুনানির প্রস্তুতিতে নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে তার আইজীবীদের সাথে কথাবার্তা বলছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্ন ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পের সাথে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ব্যাপক নিরাপত্তা: আজ পরের দিকে ট্রাম্প আদালতে হাজির হওয়ার সময় ম্যানহ্যাটন আদালতের বাইরে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আশঙ্কায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রাম্প গত সোমবার ফ্লোরিডায় তার বাসভবন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন ‘উইচ হান্ট’ – শত্রুতা হাসিলের দৌড়। আমেরিকার সবগুলো সংবাদ চ্যানেল গতকাল তার এই যাত্রার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর প্রচার করেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে প্রচুর পুলিশ, আদালত কর্মী এবং গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে সাথে করে নিয়ে যাবেন নিউইয়র্কে ম্যানহ্যাটনের নি¤œ আদালত চত্বরে।
তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে স্থানীয় সময় বেলা ২টা ১৫ মিনিটে। তার আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে ট্রাম্প নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে আবেদন করবেন। তবে তার আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানহ্যাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের দফতরে আত্মসমর্পণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেখানে কর্মকর্তারা তার আঙুলের ছাপ নেয়ার এবং কাগজপত্র তৈরি করার পর তাকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নেয়া হবে কিনা সেটা বিবেচনা করা হবে। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হবে, যেখানে তার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে এবং তিনি নিজেকে দোষী বা নির্দোষ বলে আবেদন জানানোর সুযোগ পাবেন।
ট্রাম্পের সাবেক অ্যাটর্নি মাইকেল কোয়েন পর্ন ছবির তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ট্রান্সফার করেছিলেন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে- এই অভিযোগের তদন্ত হচ্ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ ‘অসত্য’ বলছেন ট্রাম্প: ট্রাম্প মিজ ড্যানিয়েলসের সাথে কোনোরকম যৌন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন। কারো মুখ বন্ধ করার জন্য অর্থ দেয়ার চুক্তি অবৈধ নয়, কিন্তু ম্যানহ্যাটনের কৌঁসুলির তদন্তের বিষয় ছিল- এই অর্থ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তার ব্যবসায়িক নথিতে কারচুপি করা হয়েছিল কিনা। এই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্তত একটি খুবই গুরুতর অভিযোগ আনা হবে বলে আমেরিকার গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, যার জন্য আমেরিকার আইনে গুরুতর সাজার বিধান রয়েছে। অন্যান্য খবরে বলা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ৩০টি আলাদা অভিযোগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বিচারপতি জুয়ান মার্চানের কাছে আদালতের ভেতরে ক্যামেরা নেয়ার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের আইনজীবীরা এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত দিয়ে বলেন, এটা ‘আদালতে শুনানির সময় একটা সার্কাসের পরিবেশ তৈরি করবে’।
কিন্তু গত সোমবার রাতে বিচারপতি মার্চান রায় দেন যে আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে কিছু সাংবাদিককে ভেতরে কয়েক মিনিটের জন্য ঢুকে ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হবে। অনেকে ধারণা করছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টকে জামিনে মুক্তি দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফ্লোরিডায় তার বাসভবন মার-এ-লাগোতে ফিরে যেতে দেয়া হবে। সেখান থেকে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১৫মিনিটে তিনি তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
উৎসাহী জনতার ভিড়: গত সোমবার ফ্লোরিডার পাম বিচ থেকে তার ম্যানহ্যাটন যাত্রার লাইভ বিবরণ দেখেছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। অনেকে ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে কুইন্সের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর পর্যন্ত তার প্রায় চার ঘণ্টার বিমানযাত্রার পুরো পথ তাকে সরাসরি অনুসরণ করেছে। বিমানটি ছিল লাল, সাদা আর নীল রং করা – তার একপাশে বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘ট্রাম্প’। সাবেক প্রেসিডেন্টের ম্যানহ্যাটন বাসভবনে যাওয়ার মূল সড়ক পথগুলো তার আগমনের খবরে ছিল নিউইয়র্কবাসী ও পর্যটকদের ভিড়ে ঠাসা।
প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা তাদের সংবাদ সংগ্রহ সরঞ্জাম নিয়ে ছিলেন হাজির। ফিফ্থ অ্যাভিনিউর মাথার ওপর আকাশে উড়ছিল সংবাদকর্মীদের অন্তত পাঁচটি হেলিকপ্টার। ট্রাম্প গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৪টার অল্প পরে ট্রাম্প টাওয়ারে ঢোকেন। ঢোকার আগে তিনি সাংবাদিক এবং জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। ধারণা করা হচ্ছে, গতরাত তিনি কাটিয়েছেন ট্রাম্প টাওয়ারে তার আইন পরামর্শকদের সাথে পরামর্শ করে। তার পেছনে রয়েছে বড় বড় আইনজীবীদের একটি বিশাল দল।
তার নির্বাচনী প্রচারণা দল থেকে বলা হচ্ছে, গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের খবর প্রকাশের পর ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ট্রাম্পের প্রচারণা তহবিলে ৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ এসেছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস সম্ভাব্য ‘অসন্তোষ সৃষ্টিকারীদের’ সতর্ক করে তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন’। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প সমর্থকরা আদালতের সামনে সমাবেশের পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও ২০২১ সালে ক্যাপিটলে দাঙ্গার আগে ট্রাম্প সমর্থকদের যে ধরনের মিছিল-সমাবেশ দেখা গিয়েছিল সেরকম কোনো প্রতিবাদের চিত্র সাম্প্রতিক কয়েক দিনে চোখে পড়েনি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সূত্র : বিবিসি