প্রচণ্ড গরমে রাজধানীজুড়ে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের। একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া রসালো এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। কচি তালের শাঁস ও পাকা তাল বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে শুরু করে লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, রায়সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, টায়ারপট্টি, ইসলামপুর, বংশাল, বাবুবাজার, সিদ্দিকবাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন গলিতে, রাস্তার পাশে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের পছন্দের খাবার হিসেবে সমাদৃত তালের শাঁস। মানুষের চাহিদা থাকায় পুরান ঢাকাজুড়ে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে এই ফল।
ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালের শাঁস কিনেছিলেন কলতাবাজারের বাসিন্দা জোহরা বেগম। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনও ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনও ধরনের ভেজাল নেই। তবে তালের শাঁস সুপারশপে বিক্রি হয় না, এটা কেবল ফুটপাত বা মহল্লার অলিগলিতে পাওয়া যায়। ছোট শাঁস অনুযায়ী দাম কিছুটা বেশি হলেও এ নিয়ে কিছু বলার নেই। বিক্রেতারা কষ্ট করে কেটে দেয়। লাভ না হলে তারা চলবে কীভাবে।’ আরেক ক্রেতা ও প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুব্রত বলেন, ‘গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি তালের শাঁস অনেক উপকারী। এটা ডায়েটের জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। লিভার, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা এগুলোর জন্যেও উপকারী। এটা খেতেও সুস্বাদু। এজন্য নিজে খেলাম পরিবারের সদস্যদের জন্যেও নিলাম।’
তালের শাঁসের খুচরা বিক্রেতা হিরন জানান, গত বিশ বছর ধরে গরম এলেই তিনি তালের শাঁস বিক্রি করেন। আগে এলাকায় বিক্রি করতেন, এখন সদরঘাট এলাকায় বিক্রি করেন। বেচাকেনাও ভালো। পরিবহন ও ঘাটের খরচসহ সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক সাত-আটশ’ টাকা লাভ থাকে। গরম যতো বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। বরিশাল থেকে লে ঢাকায় তাল আনেন বলে জানান পাইকারি বিক্রেতা দুলাল। তিনি বলেন, ‘সব খরচ একসঙ্গে ধরে গড়ে এক ছড়া তাল পাইকারি একশ’ টাকা বিক্রি করা হয়। আমাদেরও লাভ থাকে, তবে সীমিত। বেচাকেনা বেশি হলে লাভ বেশি হয়। এক ছড়াতে বারো থেকে চৌদ্দটি তাল থাকে। কোনও ছড়ায় আরও বেশি থাকে। আমাদের কাছ থেকে যারা পাইকারি কেনেন তারা একটা তালের শাঁস ১০ টাকা করে বিক্রি করেন।’