‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে’ শিশুতোষ কবিতাটিতে কবির বর্ণিত তালগাছ ও বাবুই পাখির বাসা কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে তালগাছের ডালে ডালে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়তো। তাতে অসংখ্য বাবুই পাখি দেখা যেতো। দলবেঁধে উড়ন্ত বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর ছিল গ্রামীণ জনপদ। কিন্তু বর্তমানে নেই তালগাছ, নেই বাবুই পাখি। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বর্তমানে বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী তালগাছ। একই সাথে শিল্পী পাখি নামে খ্যাত বাবুই পাখিও আজ হারিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও হোসেনপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তালগাছ ছিল। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অবাধে তালগাছ নিধন করায় উপজেলাটি প্রায় তালগাছ শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে নেই বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। স্থানীয় পরিবেশবিদদের মতে, অবাধে তালগাছ নিধনের কারণে ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ ও পশু-পাখি। গত বছর বিজলি পড়ে হোসেনপুরে বেশ কয়েকজন লোক ও অনেক পশু মারা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুই-তিন বছর আগেও উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০ হাজার তালগাছ ছিল। ভাদ্র মাসে গাছভরা থাকতো তাল। গাছ থেকে পাকা তাল ঝড়ে পড়ত। গ্রামের মানুষ কুড়িয়ে পাওয়া তাল দিয়ে তৈরি করত সুস্বাদু পিঠা-পায়েস। তালের পাতা দিয়ে তৈরি হতো নানা কারুকার্যের হাতপাখা। ইটভাটায় লাকড়ি ও ঘরের পিলারসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে তালগাছ। ৯০ শতাংশ তালগাছ আগেই কাটা হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একে এম সাজাহান কবির জানান, তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী বৃক্ষ। এ গাছ প্রবল ঝড় বৃষ্টি ও আকাশের বিজলি থেকে মানুষ ও প্রাণিকূলকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।