সীতাকুণ্ডে আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি ভেজা গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল। আদিকাল থেকে বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাওয়া নান্দনিক কদমফুল আজ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার সবর্ত্র কদমফুল দেখা গেলেও এর আদি নিবাস চীন, মালয় ও ভারতের উষ্ণাঞ্চলে। সেখানে কদম নীপ নামেও পরিচিত। বৃত্তপুস্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর আরো কতো নাম রয়েছে কদমের। ছোট্ট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার, যাতে হলুদ রঙের পাঁপড়িগুলো আটকে থাকে। পাঁপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসতে থাকে প্রকৃতির মাঝে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে নান্দনিক হলেও এর আর্থিক মূল্য খুবই স্বল্প। কদম কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরিতে অনুপযোগী। তবে কাঠ দিয়ে বাক্সপেটরা, দিয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। শুধু সৌন্দর্যে আর মাধুর্যে নয়, ভেষজগুণের পাশাপাশি কদমে রয়েছে আরো বিশেষ গুরুত্ব। কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক হলেও গ্রাম বাংলায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই অতীত। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টিতে দক্ষিণা হালকা বাতাসে হলুদ-সাদা ফুলে দোল খাওয়া কদমের নেই আগের মতো জৌলুস। দূর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে হলুদ-সাদা ফুলের ঝর্ণা। প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধণ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ বৃক্ষের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ আনোয়ার হোসেন, পৌরসদরস্থ দলিল লেখক মোঃ শাহ আরমান ও সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ দিদারুল আলম জানান, গাছ মানবদেহের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত ও বায়ু দূষণমুক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গাছের পাতা, ফুল ও ফল যেমন সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি আমাদের চারপাশকে কদম গাছের সবুজ পাতা ও ফুল সৌন্দর্যবর্ধন করে। এক সময় এয়াকুবনগর, পন্থিছিলা ও বহরপুর সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বাড়ীর সামনে, রাস্তার পাশে, পুকুর ও খালের পাড় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক কদম গাছের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি। উপজেলার ছোট দারোগারহাট তাহের-মন্জুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান জানান, মহাসড়ক ডিভাইডারে ঝুলছে মনোরম সাদা-হলুদ রঙ্গের কদমফুল। গতকাল চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে গাড়ীতে বসাবস্থায় মহাসড়ক ডিভাইডারে নান্দনিক কদম ফুলের দৃশ্যে মনটা ভরে যায়। বর্তমানে বৃক্ষ রোপনের তালিকায় নান্দনিক কদম গাছ নেই, তবে নিয়মিত কর্তন হচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্ত হওয়া কদম গাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।