জয়পুরহাটের পাঁচবিবির ব্যস্ততম সড়ক দানেজপুর ১ নং রেলগেট। এটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। দিনে দিনে রেলগেট সড়ক দিয়ে ভারি ও সবধরনের যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচল বাড়লেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৫ ঘন্টায় রেলগেট বন্ধ থাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় শহরবাসীকে। সম্প্রতি ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেলগেটের এই ভোগান্তি আরো প্রকট হয়েছে। পাঁচবিবিবাসীর অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রেলগেট। এটি পাঁচবিবির পূর্ব ও পশ্চিম উপজেলাকে পৃথক করে রেখেছে। রেলগেটের কারণে অবহেলিত পূর্বেপ্রান্তের এলাকাবাসী। নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এই এলাকার বাসিন্দারা। রেলগেটের কথা চিন্তা করে রিক্সাচালক যেতে চায় না বলেও জানান স্থানীয় অধিবাসীরা। রেলগেট চত্বরে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি বহুল প্রতাশিত এই দাবি। পাঁচবিবি রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, এই রেলগেট দিয়ে দিনে ২৪ ঘন্টায় ২৬ টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তঃনগর (আপ-ডাউন) ২২টি, মেলট্রেন (আপ-ডাউন) ৪টি। এছাড়াও কোন কোন দিন ২/৩টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। রেলগেট প্রতিদিন প্রায় ৫ ঘন্টা বন্ধ থাকায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থী, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, আইশৃঙ্খলা বাহিনার অভিযান, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চলাচলসহ জীবনযাত্রা থমকে পড়ে। প্রতিদিনই এখানে ঘণ্টায় ঘন্টায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যুগ যুগ ধরে পাঁচবিবিবাসী যানজটের ভোগান্তি পোহালেও সমস্যার নিরসন হচ্ছে না। প্রতিটি ট্রেন চলাচলের সময় ৭-১০ মিনিট হিসাবে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য ২৬ বার ছাড়াও মালবাহী ও তেলবাহি ট্রেন চলাচলে বন্ধ থাকে রেলগেট। এসময় উভয় পাড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। এতে হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি পাশাপাশি সময় নষ্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলগেটের পশ্চিম প্রান্তে উপজেলা পরিষদসহ ১৭টি দপ্তর, ভূমি, সাব-রেজিস্ট্রি, ফায়ার সার্ভিস, স্কুল ১০টি, স্কুল এন্ড কলেজ ২টি, বাজার, পুলিশ থানা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে রেলগেটের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে সদর হাসপাতাল, ব্যাংক, সরকারি অনার্স কলেজ, পাঁচবিবি ডিগ্রি কলেজ, পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস, মাদ্রাসা, সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ। সব প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র এই রেলগেট। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত স্টেশন আগের নিয়মেই পরিচালিত হচ্ছে। সময় অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে এবং বর্তমান সরকারের রেল পথের উন্নয়নের কারণে ট্রেনের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দেশের বহু রেলগেট এরই মধ্যে ডিজিটাল প্রদ্ধতির লক সিস্টেম চালু হলেও পাঁচবিবি রেলগেট মান্ধাতা আমলেই রয়ে গেছে। রিক্সাচালক সন্তোষ বলেন, প্রতিদিনই যাত্রী নিয়ে আধা ঘন্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। চাহিদামতো দিনে ভাড়া খাটতে পারি না। স্থানীয় ব্যবসায়ী নান্নু বলেন, রেলগেটে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘন্টায় ঘন্টায় যানজটে রাস্তা পারাপার কঠিন হয়ে পড়ে। পাঁচবিবি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ওয়ার হাউস ইনচার্জ মোঃ রতন হোসেন বলেন, অগ্নিনির্বাপক, সড়ক দূর্ঘটনা বা জরুরী সেবামূলক কাজে পশ্চিম থেকে পূর্ব প্রান্তে যাওয়ার সময় প্রায় রেলগেটে যানজটের কবলে পড়তে হয়। পাঁচবিবি পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, পাঁচবিবির প্রধান সমস্যা হিসেবে এই রেলগেট চিহ্নিত। সমস্যা সমাধানে ফ্লাইওভার নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে অপ্রশস্ত বিকল্প রাস্তাগুলো সংস্কার করা হলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।