সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

মা হারা অবুঝ দুই শিশু নিয়ে অসহায় রিকসা চালক বাবা চেয়েছেন সহযোগিতা

শামীম আহমেদ বরিশাল :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

তালাবদ্ধ ঘরের বিছানায় খেলা করছে অবুঝ দুই ভাই-বোন। এরমধ্যে মরিয়মের বয়স সাড়ে তিন বছর আর তার ভাই নূরের বয়স ১৮ মাস। তালাবদ্ধ ঘরেই জীবন কাটছে মা হারা অবুঝ ওই দুই শিশুর। প্রসাব-পায়খানা করে নোংরার মাঝেই বসে থাকতে হয় তাদের। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া হাজেরা খাতুন স্কুল সড়কের মোহাম্মদিয়া মসজিদ সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসার এক কক্ষে এমন মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে দুই শিশু। দুইজনের মুখে এখনো স্পষ্ট কথা ফোটেনি। অবুঝ ওই দুইশিশুর বাবা ফিরোজ সিকদার রনি পেশায় একজন রিকশাচালক। তিনিই ওই দুই শিশুর একাধারে মা ও বাবা। কারণ শিশু দুটির মা বেঁচে নেই। বাসা ভাড়া ও শিশুদের মুখে আহার তুলে দেওয়ার জন্য অবুঝ দুই সন্তানকে ঘরে তালাবদ্ধ করে প্রতিদিন রিকসা নিয়ে বের হতে হয় ফিরোজের। কারণ ওই দুই শিশুকে দেখার আর কেউ নেই। তবে সারাদিন পর তালা খুলে বাবা ঘরে প্রবেশ করতেই হাসির ঝলক বয়ে যায় শিশু মরিয়ম ও নূরের মুখে। এভাবেই ফিরোজ তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পিতৃত্বের চরম পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন প্রতিটি মুহুর্তে। বৃহস্পতিবার সকালে ফিরোজ সিকদার রনি বলেন, ওদের তালাবদ্ধ ঘরে রেখে যেতে খুব খারাপ লাগে। খুব টেনশন হয়। যেকারণে রিকসাও ঠিকমতো চালাতে পারি না। সব সময় মনটা পড়ে থাকে সন্তানদের কাছে। তারপরেও পেটের দায়ে নিরুপায় হয়ে ওদের তালাবদ্ধ ঘরে রেখে যেতে হচ্ছে। ফিরোজ আরও বলেন, বিনা দোষে কারাভোগ করেছি। আমি বুঝি জীবনে কষ্ট কাকে বলে। ওরা আমার সন্তান। আমার গর্ভধারীনি মা আমাকে ছোট রেখে মারা গেছেন। আমি বুঝি মা ছাড়া সন্তানের কি কষ্ট। ওদের (শিশু) মা মারজান বেগমের মৃত্যুর পর এখনও বিয়ে করিনি, কারণ নতুন বউ এসে যদি আমার সন্তানদের তাড়িয়ে দেয় সেই ভয়ে। আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি কিন্ত সন্তানদের হারাতে চাই না। ফিরোজ বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতাম। কিন্ত কি যে হলো ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী মারজান আত্মহত্যা করলো। ফিরোজ ঝালকাঠির কিস্তাকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান সিকদারের ছেলে। প্রায় ১৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে তিনি বরিশালে এসেছেন। ২০১৯ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্দা মারজানকে সে বিয়ে করেন। রিকশা চালিয়েই সংসার চলতো তাদের। ফিরোজ বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। ৩০ ডিসেম্বর ভোর রাতে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে ফোন দিয়ে মারজানের অসুস্থাতার কথা বলে আগৈলঝাড়ায় যেতে বলেন। আমি গিয়ে দেখি আমার স্ত্রীর লাশ ঝুলছে। কোনো কিছু বোঝার আগেই তারা আমাকে বেঁধে মারধর করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে। পরে আমার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়। চারমাস ১৮ দিন ওই মামলায় আমি কারাগারে ছিলাম। পরে আত্মহত্যা প্ররোচণার প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতের বিচারক মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর ফিরোজ সন্তানদের নিজের কাছে নিয়ে এসে ওঠেন পশ্চিম কাউনিয়ার পুরানো ভাড়া বাসায়। স্ত্রী আত্মহত্যা করার কারণও আজ পর্যন্ত জানেন না ফিরোজ। এমনকি স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তার বাবার বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির কেউ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। তাই বলে জীবনের কাছে হেরে যেতে চান না ফিরোজ। আক্ষেপ করে ফিরোজ সিকদার রনি বলেন, যদি কেউ আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন বা কেউ একটা দোকানের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে সন্তানদের সবসময় পাশে রেখে দেখাশুনা করতে পারতাম। এতে করে অবুঝ ওই দুইশিশুকে আর তালাবদ্ধ ঘরে রাখার প্রয়োজন হতোনা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বরিশাল জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, এতোদিন বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখব এবং শিশু সুরক্ষা আইন অনুসারে যা করার দরকার সাধ্যমতো তার ব্যবস্থা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com