মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
গতকাল রোববার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় গুলশানের স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে তারা এই মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা দাবি করেন, মানারাত স্কুল অ্যান্ড কলেজটিকে নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে হাজার হাজার স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রতিষ্ঠানটি একটি সুন্দর কারিকুলামে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা দাবি করেন বিদ্যমান কারিকুলামে ইসলামি ধারার শিক্ষার যে পদ্ধতি চালু রয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে।
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, মানারাতে আধুনিক ও যুগোপযোগী ব্রিটিশ শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার ধারা আছে। সেজন্যেই আমরা আমাদের সন্তানদের এই স্কুলে দিয়েছি। পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষার যে ধারা আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখানে জড়ো হয়েছি।
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, বাংলাদেশের অন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তুলনায় মানারাতে ভালো শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমার মেয়েকে এই স্কুলে দেয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, এখানে ইংরেজির পাশাপাশি দেশপ্রেম, দেশকে ভালোবাসা একইসাথে ইসলামি শিক্ষাও সে পাবে, যেটা সবসময় হয়ে আসছিল।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, মানারাতে যেভাবে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, বাংলাদেশের দিবসগুলোকে তুলে ধরা হয় তা অনেক বাংলা মাধ্যম স্কুলেও তুলে ধরা হয় না। অথচ এই স্কুলটিকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা করেন।
তিনি আরো বলেছেন, অতীতে এই স্কুলটিকে দখল করার জন্য কয়েকবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু যখনই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, মাঠ দখলের চেষ্টা করা হয়েছে তখনই স্কুলটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। তিনি আশা করেছিলেন যে সরকার তাদের প্রতি ন্যায় করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ন্যায় আশা করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আজকে যদি শিক্ষামন্ত্রণালয় এই ষড়যন্ত্রে হস্তক্ষেপ করেন তাহলে তারা কার দিকে তাকাবেন?
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, মানারাত ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত। ইসলামিক আদর্শ ভিত্তিক এজন্য আমরা আমাদের বাচ্চাদের এখানে দিয়েছি। ছেলে ও মেয়েদের ভবন আলাদা। এখানে ছোটবেলা থেকেই ইসলামিক আদর্শ অনুসরণ করে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হয় তা যেন অব্যাহত থাকে। মানারাতে ওপর অন্য কোনো ব্যবস্থা চাপানো না হয়। ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে আজ এখানে আমরা জড়ো হয়েছি।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা কোনো পরিবর্তন চাই না। আমরা ভালোভাবে বেড়ে উঠছি। আমরা মানারাতকে ভালোবাসি। আমরা মুক্ত পরিবেশে ভালোভাবে বড় হচ্ছি। আরেক মেয়ে শিক্ষার্থী বলেন, মানারাত একটি ইংলিশ মিডিয়াম। স্কুলটির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ হবে না।
অভিভাবকদের দাবি, মানারাত অলরেডি একটি পরিচ্ছন্ন ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তারপরও এ ধরনের বৈঠকের মধ্যে অভিভাবকরা মানারাত ইউনিভার্সিটির মতো করে দখলের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তাই এর প্রতিবাদে অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আবু রায়হান নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চা এখানে পড়ে এখানকার পড়াশোনার মধ্যে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হয়। ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। আমরা চাই এটা অব্যাহত থাকুক।
কুলসুম বেগম নামের এক অভিভাবক বলেন, মানারাত ট্রাস্টি বোর্ড যারা আছেন তারা দেশের সর্বোত্তম ভালো মানুষ। সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় গণ্যমান্য শিক্ষকবৃন্দ আছেন। তারা তাদের জীবনে ন্যূনতম দুর্নীতির সাথে আপস করেননি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনোই অনিয়মের কোনো অভিযোগ আমরা দেখিনি। তাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লক্ষে তাদের বাদ দিয়ে যে মিটিং হচ্ছে আমরা মনে করি এটা ঠিক হয়নি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাদেরকে রেখে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল।
সাবিনা নামের একজন অভিভাবক বলেন, একটার পর একটা ভালো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হচ্ছে। এর আগে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট দখল করা হয়েছে। সভ্য সমাজে এভাবে ট্রাস্ট দখল চলতে দেয়া যায় না। চলা উচিত না। এছাড়া এর মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষিত এবং সুশীল সমাজকে অপমানিত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৭ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদেশী মাধ্যমে পরিচালিত মানরাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে একটি সভার আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট সকাল ১১টায় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই সভা ডাকা হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিএমপি, সচিবালয়, শিক্ষাবোর্ড, জেলা প্রশাসক ও সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর আগে এরূপ একটি সভা ডেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করে সরকারের মনোনীত লোকদের বসানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি