ঢাকা ও প্যারিস গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) করবি হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র দুটি স্বাক্ষর করে বিনিময় করা হয়। চুক্তি দুটির একটি হলো- ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট সংস্থার (এএফডি) মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট এবং আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) চুক্তি। ইআরডি সচিব শরিফা খান ও এজেন্স ফ্রান্সেইস দো ডেভেলপমেন্ট (এএফডি)’র কান্ট্রি ডিরেক্টর বোনুই শসেত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রথম চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন বিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও স্পেস সিস্টেম, এয়ারবাসের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ভেসভাল।
দেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, ফরাসি কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের নির্মিত। এটি ২০১৮ সালের ১২ মে উৎক্ষেপণ করা হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, মাখোঁ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে তারা ফটো সেশনে অংশ নেন।
পরে, তারা একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ত্যাগের আগে, মাখোঁ পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে, সকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
এটি বাংলাদেশে মাখোঁর প্রথম ও কোন ফরাসি প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় সফর। এর আগে ১৯৯০ সালের ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিতেরো বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
১৯৯০ সালের শুরুর দিক থেকে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪.৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স হচ্ছে ৫ম দেশ।
ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ ও পানিসহ বিভিন্ন খাতে সম্পৃক্ত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
ভারতের নয়াদিল্লীতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের পর মাখোঁ দুই দিনের এক সরকারি সফরে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট রোববার রাত ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। সেখানে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অর্নার ও ২১টি তোপধ্বণীর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে মাখোঁ হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে যান। সেখানে তিনি তার সম্মানে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত একটি আনুষ্ঠানিক নৈশ্যভোজে অংশ নেন। পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্থানীয় ব্যান্ড দল জলের গানের সঙ্গীত আয়োজন উপভোগ করতে ধানমন্ডিতে অবস্থিত জলের গানের স্টুডিওতে যান। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।