শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

২৮ অক্টোবর: বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, সতর্ক পুলিশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। একই দিনে ঢাকায় সমাবেশ করবে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। ওই দিনই বিএনপির কর্মসূচিস্থল থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে গুলিস্তানে মহাসমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা। একই দিন বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আর সমমনাদের মাঠে থাকা, সব মিলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও করণীয় নির্ধারণে দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিশৃঙ্খলার গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থেকে পুলিশ নিচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের তালিকা ধরে ওয়ারেন্টভুক্তদের গ্রেফতারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি নেতাদের রাত্রিকালীন অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার একদিনেই গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ২২৯ নেতাকর্মীকে।
সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএমপির সব পর্যায়ের সদস্যদের ছুটি নিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের পর যাতে সমাবেশস্থলে কোনো নেতাকর্মী অবস্থান করতে (বসে পড়তে) না পারে সেজন্য পুলিশ নিচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি। সহিংসতা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব বিষয় জানিয়ে ডিএমপি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি নাগরিককে অবরুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। অবরুদ্ধ কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ হবে। সেদিন ঢাকায় বসে পড়ার কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না। তবুও সতর্ক পুলিশ। কারণ কর্মসূচি ঘোষণার দিনই মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টির জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে তারা। এমনকি হোটেলে থাকা নেতাকর্মীদেরও হয়রানি করছে। প্রতিদিনই শহরের কোনো না কোনো প্রান্তে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অথবা হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশই নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারছেন না। আটক করে পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। ২৫ অক্টোবরের পর থেকে ব্যাপক গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং ওয়ারেন্টভুক্ত তাদের গ্রেফতার করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সমাবেশ ঘিরে তিন স্তরে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকায় প্রবেশের সময় তল্লাশি জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রতিটি হোটেল ও মেসে নিয়মিত তল্লাশি চালাবে পুলিশ। কারণ নাশকতা কিংবা সহিংসতার জন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য রাখতে পারে। সর্বশেষ বসে পড়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবো। চেকপোস্ট প্রয়োজন হলে করা হবে। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তায় যা যা দরকার তাই করা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত।
জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি নিশ্চিত করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টগুলোতে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবেন কর্মকর্তারাও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসাবে।
পুলিশ বলছে, প্রায় দুই কোটির বেশি ঢাকার জনগণের নিরাপত্তায় প্রস্তুত ডিএমপি। যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে সর্বদা কাজ করছে। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী মাঠে পুলিশ কাজ শুরু করছে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যানজট পরিস্থিতি মোকাবিলা, নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার কৌশলে পুলিশ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। সাইবার স্পেসেও মনিটরিং করবে পুলিশ। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ কেন্দ্র করে নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করবে র‌্যাব। সাইবার ওয়ার্ল্ডে ঝুঁকি মোকাবিলায় ও গুজব রোধে র‌্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, মহাসমাবেশ ঘিরে কেউ কেউ অস্ত্র ও বিস্ফোরক সঙ্গে আনতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারে গোয়েন্দাদের নেতৃত্বে অভিযান চালানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এখনো নয়াপল্টনে মেলেনি অনুমতি: ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গত ২১ অক্টোবর ডিএমপি কার্যালয়ে চিঠিটি পৌঁছে দেয় একটি প্রতিনিধিদল। তবে সে চিঠির জবাব এখনো মেলেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশ করতে নিষেধ যেমন করা হয়নি, তেমনি সাড়াও মেলেনি।
পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে: গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশনের পূজাম-প পরিদর্শন শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই। তবে জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি যারা করার তারা করবে। জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিতে আমরা প্রস্তুত। এ বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে পাল্টাপাল্টি: গত ২২ অক্টোবর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে সড়ক বন্ধ করা হবে কি না তা জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। আমাদের এ ধরনের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছি। তবে সেদিন রাতেই দূতাবাসের মুখপাত্র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে পিটার ডি হাসের বৈঠকে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকায় রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
২৮ জুলাই মহাসমাবেশ করে বিএনপি। তবে এবারের মহাসমাবেশ দলটি বলছে ‘মহাযাত্রা’
সামগ্রিক বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ঢাকার দুই কোটি নাগরিককে অবরুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। অবরুদ্ধ কাউকে করতে দেওয়া হবে না।
সাঁড়াশি অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে যদি প্রয়োজন হয় আমরা অবশ্যই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবো। চেকপোস্ট প্রয়োজন হলে করা হবে। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তায় যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রস্তুত। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, যে রাজনৈতিক দলই সমাবেশ করার অনুমতি পাবে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ কাজ করবে। ঢাকা শহরে এসে বহিরাগতরা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এটি আমাদের রুটিন কাজ। এটা সব সময়ই করি। আজও আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। চেকপোস্ট, অভিযান আছে বলেই ঢাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছে। ওয়ারেন্টের আসামি ধরার অভিযানও অব্যাহত থাকবে। কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নামে হয়রানি করা হচ্ছে না।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিগত সময়ে দেখেছি বিভিন্ন দল তাদের কর্মসূচি পালন করে আসছে। আগামী ২৮ অক্টোবর সমাবেশ কেন্দ্র করে নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি নেই। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা প্রদানে কাজ করবে র‌্যাব। সাইবার ওয়ার্ল্ডে ঝুঁকি মোকাবিলা ও গুজব রোধে র‌্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে। ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূলমন্ত্র লালন করে দেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে র‌্যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার কথা আগে চিন্তা করে সে অনুযায়ী প্ল্যান সাজানো হয়। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে। কেউ জ্বালাও-পোড়াও কিংবা অগ্নিকা- ঘটিয়ে সহিংসতার চেষ্টা করলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ২৮ অক্টোবর ঘিরে পুলিশ সদস্যদের ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বিদের দুর্গোৎসব চলায় অনেকেই এখন ছুটিতে আছেন। ২৮ অক্টোবর ছুটি নেওয়া যাবে না এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কারও জরুরি প্রয়োজন হলে অবশ্যই ছুটি দেওয়া হবে। তবে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো ছুটি থাকলে আপাতত নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সিনিয়র কর্মকর্তারাও এমন মুহূর্তে ছুটি নেন না।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে যে কোনো রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, মিছিল-মিটিং সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ নিরাপত্তাও দিয়ে থাকে। ঢাকার সোয়া ২ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ডিএমপি বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে যদি কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।- জাগো নিউজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com