লড়াই করলো বটে, তবে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠলো না বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে টাইগারদের থেকে জয় ছিনিয়ে নিউজিল্যান্ড। মিরপুরে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে কিউইরা। ফলে সিরিজ জয়ের স্বাদ আরাধ্যই থেকে গেল বাংলাদেশের। সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
গতকাল শনিবার টেস্টের চতুর্থ দিনে ৬৯ রানেই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন মিরাজ-তাইজুলরা। কিউইদের চেপে ধরেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। এক গ্লেন ফিলিপসের কাছেই ধরাশায়ী টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেললেন ম্যাচজয়ী ৪০* রানের ইনিংস। অথচ তাকে ফেরানোর সুযোগ ছিল রানের খাতা খোলার আগেই। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ফিলিপসের ব্যাটের কানায় লাগা বল স্লিপে গেলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। হাত ফসকে যাওয়া সেই ক্যাচই যেন শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
অবশ্য বোলারদেরই বা আর কী করার ছিলো! মাত্র ১৩৭ রানের পুঁজি নিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে লড়াই করার স্বপ্ন দেখাটাও তো আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মতোই। তবুও খেলাটা যখন মিরপুরে, খানিকটা আশা ছিলোই। আশার পালে হাওয়া দিলেন তাইজুল-মিরাজরাও। শুরু থেকেই কিউইদের চেপে ধরে টাইগাররা। তবে প্রথম ধাক্কা দেন শরিফুল ইসলাম। ডেভন কনওয়েকে ফেরান ২ রানে। এরপরই জ্বলে উঠে তাইজুল-মিরাজ জুটি। কেন উইলিয়ামসনকে (৩) ফেরান তাইজুল, ২ রান করে হ্যানরি নিকোলস শিকার হন মিরাজের। পরের আঘাতটা আগে হানেন মিরাজ। ফেরান থিতু হয়ে যাওয়া টম লাথামকে। ৬০ বলে ২৬ রানে আউট হন তিনি। পরের ওভারেই টম ব্লান্ডেলকে নুরুল হাসান সোহানের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তাইজুল। ৫১ রানে ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
উইকেট সংখ্যাটা খুব দ্রুতই ৬ হতে পারত। আর সেই ষষ্ঠ উইকেট হতে পারতেন প্রথম ইনিংসে ৮৭ রান করা গ্লেন ফিলিপসের। তবে ২৭তম ওভারে ১৯ রান করা ড্যারিয়েল মিচেলকে সেই নাজমুলের তালুবন্দী করান মিরাজ। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারায় কিউইরা। তবে এরপর আর কোনো বিপদ আসতে দেননি গ্লেন ফিলিপস ও মিচেল সান্টনার। দুজন মিলে ৭৭ বলে ৭০ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ইনিংসের ৪০তম ওভারে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। স্যান্টনার ৩৯ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৫ রানে। ৩ উইকেট নেন মিরাজ, ২ উইকেট নেন তাইজুল। এর আগে শনিবার ৩৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের শুরুটা ভালো হলেও ছন্দ ধরে রাখা যায়নি বেশিদূর। এজাজ প্যাটেল আর সান্টনার মিলে ভেঙে দেন ইনিংসের মেরুদ-। বেরিয়ে আসে ব্যাটিং অর্ডারের লেজ। এক শ’র আগেই হারায় ৭ উইকেট! দিশেহারা দলকে পথ দেখান জাকির হাসান।
ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে জাকি আউট হন ৯ নম্বরে। এর আগে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। খেলেন ৮৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। তার ব্যাটে ভর করেই ৩৫ ওভারে ১৪৪ পর্যন্ত পৌঁছায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দিয়েছে ১৩৭ রানের। গতকাল শনিবার তৃতীয় দিনের সকালে পাল্টা আক্রমণ হানে বাংলাদেশ। আগ্রাসন ধরে রেখে ব্যাট করার চেষ্টা করেন জাকির হাসান ও মুমিনুল হক। ৪২ বলেই যোগ হয় ৩৩ রান। এরপরেই শুরু হয় ধস।
এজাজ প্যাটেলের শিকার হয়ে ১০ রান সাজঘরের পথ ধরেন মুমিনুল। ৭১ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্রুত ফেরেন মুশফিকুর রহিমও, মি. ডিপেন্ডেবল নামটার প্রতি সুবিচার করা হয়নি তার। ৯ রান আসে তার ব্যাটে। এক ওভার পর এসে সান্টনার ফেরান শাহাদাত হোসেন দিপুকেও, এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তাকে। ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। এরই মাঝে একই ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন এজাজ। ২৫তম ওভারে এসে প্রথম বলেই সান্টনারের ক্যাচ বানান মেহেদী মিরাজকে। ৭ বলে ৩ রান করেন তিনি। তিন বল পর এলবিডব্লু করেন নুরুল হাসান সোহানকে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই উইকেট কিপার। ৯৭ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেট ৯৭ রান। একপ্রান্ত আগলে রাখা জাকির নাইম হাসানকে নিয়ে পাড়ি দেন তিন অংকের গণ্ডি। তবে ইনিংসটা আর বড় করতে পারেননি। ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম। ৫৭ রানে ৬ উইকেট নেন এজাজ প্যাটেল, ৩ উইকেট নেন মিচেল সান্টনার। অপর উইকেট টিম সাউদির। এবার এজাজদের দেখানো পথে তাইজুল-মিরাজরা হাঁটতে পারলেই হয়! এর আগে বুধবার মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তবে কিউই স্পিনারদের তা-বে মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেনি নিউজিল্যান্ডও। মাত্র ৪৬ রানে ৫ উইকেটে হারানো কিউইরা গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ৮৬ রানে ভর করে এগিয়ে যায়। ১৮০ রানে থামে তাদের ইনিংস। ৮ রানের লিড নেয় সফরকারীরা। মাঝে বৃষ্টির কারণে গড়ায়নি দ্বিতীয় দিনের খেলা। তৃতীয় দিন খেলা হয় মাত্র ৩২.৩ ওভার।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে লিড ভাঙার আগেই মাহমুদুল হাসান জয়কে হারায় বাংলাদেশ। আর দিনের শেষ বেলায় হারায় নাজমুল হোসেন শান্তকেও। বাংলাদেশ অধিনায়ক করে ১৫ রান। ২ উইকেটে ৩৮ রান তৃতীয় দিন শেষ করে টাইগাররা। যেখানে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের নেয়া ৮ রানের লিড ভেঙে স্বাগতিকেরা এগিয়ে থাকে ৩০ রানে।