গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের চাষিরা। অনেক বীজতলায় বীজ হলুদ ও লাল বর্ণের হয়ে গোড়া পচে নষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চারা সংকটের সঙ্গে বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে থেকে বাড়তি দামে বীজ ক্রয় করে ধান রোপণ করতে হবে বলে দাবি কৃষকদের। আর কৃষি অফিস বলছে, বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হিলিতে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র শীত অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকছে। আর গত ৮-৯ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না, দিনেও কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকছে আকাশ। টানা কয়েকদিন এমন আবহাওয়ার পর বৃহস্পতিবার খানিক সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও এর তীব্রতা ছিল বেশ কম। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার পর সূর্যের দেখা মিললেও আজও তীব্রতা কম।
কৃষকরা জানিয়েছেন, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বীজগুলো হলুদ বর্ণের হয়ে পচে নষ্ট হয়ে মরে যাচ্ছে। কোনও ওষুধ প্রয়োগ করেই কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে আবারও বীজতলা তৈরি করতে হওয়ায় বাড়তি খরচের পাশাপাশি বোরো চাষাবাদে বাড়তি সময় লাগবে তাদের। যার কারণে আসন্ন বোরো আবাদ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন তারা। হিলির বৈগ্রাম এলাকার কৃষক আব্দুল রহিম বলেন, ‘এই যে গত কয়েকদিন ধরে যে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা পড়েছে। যার কারণে আমরা যে বোরোর বীজতলা তৈরি করেছি, সেগুলোতে বীজ মরে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর এমনটি দেখা যায় না। কিন্তু এবার ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে বীজতলার অবস্থা খুবই খারাপ। হলুদ ও লাল বর্ণের হয়ে বীজ মরে যাচ্ছে, কোনও ট্রিটমেন্ট করেও লাভ হচ্ছে না। কী ওষুধ দেয়, না দেয়; আর কীভাবে যে এই রোগ ভালো হবে- তার কোনও কুল কিনারা পাচ্ছি না। জমিতে ওষুধ দিতে দিতে একেবারে হয়রান হয়ে গেছি। শুধু আমার নয়, সবারই বীজতলার একই রকম অবস্থা দেখা দিয়েছে।‘
হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বীজ একেবারে শেষ হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। বীজতলায় ওষুধপত্র দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। এই ঘনকুয়াশার কারণে দু-দিন পরপর ওষুধ দিয়েও বীজ মরা ঠেকানো হচ্ছে না। কেমন করে যে সামনে বোরো ধান রোপণ করবো, সেই নিয়ে এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছি। বীজগুলো সব মরে যাচ্ছে যার কারণে বোরো ধান রোপণ করতেই পারবো নাÍ এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে থেকে বীজ কিনে রোপণ করতে হবে। এতে করে খরচ যেমন বেশি হবে, তেমনি ধান রোপনে সময় বেশি লাগবে।
হিলির চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যারা আগেভাগে ধানের বীজ রোপণ করেছেন, তাদেরগুলো কিছুটা ভালো রয়েছে। কিন্তু যারা পরে রোপন করেছেন শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে তাদের বীজের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বোরো রোপণ নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে, বীজের ঘাটতি দেখা দিবে। প্রত্যেক কৃষক তার কী পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ করবেন, সেই মোতাবেক বীজ রোপন করেছেন। কিন্তু যে মাপ করে বীজ রোপণ করেছিলাম এখন সেই মোতাবেক বীজ না হলে তো অবশিষ্ট বীজ বাইরে থেকে কিনতে হবে।’
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, ‘শীত ও ঘনকুয়াশার কারণে সকাল ১১টা পর্যন্ত বোরোর যে বীজতলাগুলো রয়েছে, সেগুলো স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর যদি দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলে তাহলে ১২টা পর্যন্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ও রাতে সেটি খুলে রাখতে হবে। সেই সাথে বীজতলায় হালকা কুসুম গরম পানি স্প্রে করার কথা বলছি কৃষকদের। এছাড়া ম্যানকোজেভ গ্রুপের যে ছত্রাকনাশক রয়েছে, সেটি স্প্রে করে তাহলে চারাগুলো যেমন সুস্থ সবল থাকবে ও ঘন কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাবে। কৃষকরা সেই মোতাবেক কাজ করছেন, এতে করে বীজতলাগুলো ভালো রয়েছে বলেও দাবি তার। এছাড়া আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া ভালো হলে এটি কেটে যাবে বলেও দাবি এই কৃষি কর্মকর্তার।
আবহাওয়া অধিদফতর দিনাজপুরের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরসহ আশপাশের অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। আজ তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে, এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।