শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

৩ কারণে কাক কমছে ঢাকায়, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪

একটা সময় ঢাকার মানুষের ঘুম ভাঙতো কাকের ডাকে। শহরের আনাচে-কানাচে এই পাখির সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নানা কারণে এখন আর শহরটিতে আগের মতো কাক চোখে পড়ে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসস্থান ও খাদ্যের সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং মোবাইল টাওয়ারের মতো প্রযুক্তিগত স্থাপনার আধিক্যের কারণে কাকসহ অনেক প্রাণীই ঢাকা শহর থেকে বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক চক্র বা বাস্তুসংস্থান বিপন্ন হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা।
রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাকের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। তবে রাস্তার পাশে কিংবা ময়লার ভাগাড়ের আশপাশে কাকের সংখ্যা কিছুটা বেশি। ঢাকা শহরে আগে কী পরিমাণ কাক ছিল বা কাক কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনও গবেষণা বা গণনা না থাকলেও পাখিপ্রেমী এবং পরিবেশ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা সবাই বলছেন, গত দশ বছরে কাকের সংখ্যা যে কমেছে তা খালি চোখেই বোঝা যায়। রমনা পার্ক এলাকায় নিয়মিত কাক এবং অন্যান্য পরিযায়ী পাখিকে খাবার দেন সাইফুল ইসলাম নামে এক পাখিপ্রেমী। ঢাকায় কাকের সংখ্যা কমছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনার সময় থেকে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন আমি এখানে পাখিদের খাবার দিচ্ছি। প্রথম দিকে যে পরিমাণ কাক এখানে আসতো ধীরে ধীরে তার সংখ্যা অনেক কমে গেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাক ও কুকুর সুরক্ষায় কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী সংগঠনটি গড়ে তুলেছেন। সংগঠনটির সংগঠক তাওহিদ বনী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত কয়েক বছরে কাকের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। আগে অহরহ উদ্যান বা ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে প্রচুর কাক দেখা যেতো, কিন্তু এখন সেরকম দেখাই যায় না।
তাওহিদ বনী বলেন, ‘যে হারে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে এতে কাকের মতো পাখিরা বাসস্থান হারাচ্ছে। পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও মূলত বাসস্থান সংকটের কারণে ঢাকায় কাকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

রাজধানী ঢাকায় কাক কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাক কমে যাওয়ার প্রধানত তিনটি কারণ আমরা পেয়েছি। এগুলো হলো-বাসস্থান ও খাদ্যের সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং মোবাইল টাওয়ারের মতো প্রযুক্তিগত স্থাপনার আধিক্য। এসবের কারণে কাক প্রাকৃতিক পরিবেশে তার যে সাপোর্ট প্রয়োজন হয় তা ঠিকভাবে পায় না।’
কাক কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আমিনুল বলেন, ‘প্রকৃতির নিজস্ব যে চক্র থাকে আমরা যেটাকে বাস্তুসংস্থান বলি তাতে কাক একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই চক্রে অন্যান্য পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী, বৃক্ষ ইত্যাদি সবই আছে। এই চক্র থেকে কোনও স্থান শূন্য হলে তার প্রভাব হবে ইনট্যানজিবল। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো জনবহুল শহরে তা পরিবেশ বিপর্যয়ের পর্যায়ে চলে যাবে। একই কথা চড়ুই, প্রজাপতি বা বাদুড়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com