তাওফিক মানে পথনির্দেশ, ভালো কাজের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত প্রেরণা। মহান আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে তাওবা করার এবং ভালো কাজ করার তাওফিক দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন না, তার অন্তরে অনুশোচনার অনুভূতি সৃষ্টি করেন না। তখন সে পাপকে তুচ্ছজ্ঞান করে এবং পাপাচারে অটল থাকে। ফলে ভালো কাজের তাওফিক থেকে বি ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করেন। আর জালিমদের জন্য তিনি প্রস্তুত রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৩১)
অনুরূপভাবে আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে কিছু দান করতে চান, তখন সেটার জন্য তাকে দোয়া করার অনুভূতি দান করেন। ফলে সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আর আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে সেটা দান করেন। ওমর (রা.) বলেন, আমি দোয়া কবুল হওয়ার চিন্তা করি না, বরং আমি দোয়া করতে পারব কি না সেই চিন্তা করি। কেননা যখন আমাকে দোয়া করার অনুভূতি দান করা হয়, তখন আমি বুঝে নিই, আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করার জন্যই আমাকে দোয়া করার অনুভূতি দেওয়া হয়েছে। (ইবনু তাইমিয়া, মাজমুউল ফাতাওয়া ৮/১৯৩)
তাওফিকের উৎস আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। অর্থাৎ তাওফিক আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এতে বান্দার কোনো হাত নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালিব যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তিনি বারবার স্বীয় চাচাকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু আল্লাহ তাওফিক না দেওয়ায় আবু তালিব ইসলাম কবুল করতে পারেননি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি হিদায়াত করতে পারো না, যাকে তুমি ভালোবাস; বরং আল্লাহই যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করে থাকেন। আর তিনিই হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৬)
মৃত্যুর আগমুহূর্তে নেক আমলে ব্যস্ত থাকতে পারা সৌভাগ্যের আলামত। কেননা বান্দার জীবনের শেষ আমলের মাধ্যমে তাকে সৌভাগ্যবান অথবা দুর্ভাগা বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তের আমল যদি ভালো হয়, তবে সে আল্লাহর পুণ্যবান বান্দা হিসাবে বিবেচিত হয়, আর যদি সারা জীবন ভালো আমল করেও শেষ আমল খারাপ হয়ে যায়, তবে সে আল্লাহর কাছে খারাপ বান্দা হিসাবে বিবেচিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো বান্দা জাহান্নামিদের মতো আমল করতে থাকে, অথচ সে জান্নাতি। আবার কেউ জান্নাতিদের মতো আমল করে, অথচ সে জাহান্নামি। কেননা সর্বশেষ আমলের ভিত্তিতেই মানুষের ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০৭) আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন তাকে দিয়ে ভালো কাজ করিয়ে নেন। তাকে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কিভাবে তার দ্বারা ভালো কাজ করিয়ে নেন? তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজ করার তাওফিক দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)