শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

যুগপৎ ধারায় আসবে নতুন কর্মসূচি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

বিএনপির ‘আকস্মিক’ জেগে ওঠায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে দলটির সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত যুগপৎ ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ওই মাসে যুগপৎসঙ্গীদের সঙ্গে কিছু আলোচনা শুরু হলেও পরে তা থেমে যায়। হঠাৎ করেই রবিবার (১২ মে) যুগপৎসঙ্গীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে বিএনপি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত গণতন্ত্র মে র কয়েকজন নেতা আলাপকালে জানান, বিএনপি হঠাৎ কেন মতবিনিময়ের জন্য জেগে উঠলো, তার কারণ তারা বুঝতে পারছেন না। বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৬টায় গণতন্ত্র মে র সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের থাকার কথা রয়েছে।‘বিএনপি মিটিং ডাকবে আর আমরা সহমত দিয়ে আসবো—এমন ভাবার কোনও সুযোগ নেই।’ এমন মন্তব্য গণতন্ত্র মে র প্রভাবশালী একজন নেতার। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে বিএনপি কেন মিটিং ডেকেছে তারাই বলবে।’ গণতন্ত্র মে র নেতারা জানান, নির্বাচনের চার মাসের বেশি সময় পর লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক ডাকার কারণ কী হতে পারে, তা নিয়ে মে র নেতাদের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। সোমবার (১৩ মে) মে র নেতারা সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।
মে র নেতারা বলছেন, বিএনপি হঠাৎ বৈঠক ডেকে কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলছে। এক্ষেত্রে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য কি সরকারকে এন্ডোর্স দিয়ে সামনে যাওয়া, নাকি মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য আন্দোলন তৈরি করা। গণতন্ত্র মে র অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘কালকে (বুধবার) বৈঠকে অংশগ্রহণের পর জানতে পারবো কেন বিএনপি আকস্মিক বৈঠক ডেকেছে। আমরা গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে আমাদের রিভিউ দিয়েছি। তারা কী ভাবলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি কী দেখছে, সেসব নিশ্চয়ই আলাপ হতে পারে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, চলমান আন্দোলনে গণমানুষের আস্থার যে প্রতিফলন দেখা গেছে ৭ জানুয়ারির ভোটে, এমনকি এখন উপজেলা নির্বাচনেও মানুষের অনাস্থা প্রকাশ হয়েছে। এসব গণপ্রতিক্রিয়াকে ইমিডিয়েট রাজপথে আনার চিন্তা-ভাবনা বিএনপির আছে কিনা, এসব বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। অবশ্য সোমবার (১৩ মে) বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তে মানুষ হত্যা, মিয়ানমার সীমান্তে যে বিষয়গুলো ঘটছে, তা নিয়ে আলোচনায় একমত হয়েছি—জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা কীভাবে আগামী দিনে অগ্রসর হতে পারি। কর্মসূচি গ্রহণ করার চিন্তা করছি। আমাদের জোটগুলো নিজেরা বসবে এবং আলোচনা করবে। তারা আমাদের সঙ্গে আবার বসবে।’
১২ দলীয় জোটের নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা কী কর্মসূচি দিতে পারি, তা বিএনপিকে প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরা আলোচনা করে আবারও বৈঠক করবো।’

গণতন্ত্র মে র একজন অন্যতম নেতার ভাষ্য—বৈঠকটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার বিষয়টি বিবেচনাধীন। এরইমধ্যে ১২ মে অনুষ্ঠিত ১২ দলীয় জোটের বৈঠকের পর কোনও কোনও দলের নেতা জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে আলাপ করবো।’ মে র একজন নেতা সন্দেহ প্রকাশ করেন, ‘ধারণা করছি বিএনপি হয়তো নিজেরা মুখে বলবে না, ওরা কোনও কোনও দলকে নিয়ে বলাবে। কিন্তু তাতে কী আসে যায়।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এখনও আমাদের মতবিনিময় শেষ হয়নি। মতবিনিময়ে যার যার মত সে সে দেবে। আমাদের আলোচনায় দেশের চলমান সমস্যা, অর্থনৈতিক সংকট এসব উঠে এসেছে।’
সেলিমা রহমানের ভাষ্য, ‘কেউ কেউ নানা ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা কী করবো, যুগপতে যারা তারা কী করবে—এসব আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এখানে কোনও কিছু সিদ্ধান্তের নেই।’ বিগত যেকোনও সময়ের চেয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক এখন উন্নত বলে বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, বিশেষত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ আগ্রহে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব প্রায় নেই। এমনকি চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তার অনুরোধে জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। যদিও জামায়াতের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই।
ইতোমধ্যে বিগত নির্বাচনের আগে বিএনপির কয়েকজন নেতা জামায়াতবিরোধী প্রকাশ্য অবস্থান নিলেও দলীয় দফতর বিভাগ থেকে তাদের অবস্থানকে ‘ডিজওউন’ করা হয়। এসবের নেপথ্যেও শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা ছিল।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত একমে উঠবে, এমন কোনও প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। চলমান যুগপৎ ধারায় যেভাবে চলছে, আগামী দিনেও এই পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে। তবে বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে জামায়াতের আগের চেয়ে যোগাযোগ, আস্থা বেড়েছে। সম্পর্কটা মাচমোর বেটার, সলিড।’
নিজের নাম, দলীয় পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এই নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপি ফিল করেছে জামায়াতকে ছাড়া আন্দোলন শক্তিশালী করা সম্ভব না, জামায়াতকে আন্দোলনে দরকার। এজন্য জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক লুজ করা সঠিক নয়। সর্বোপরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন বুঝতে পেরেছেন জামায়াতকে দূরে সরিয়ে রাখা কৌশলগত দিক থেকে সঠিক হয়নি। এখন যুগপৎ চলবে। একমে না এলেও রিলেশন বেটার।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১২ মে থেকে মতবিনিময় শুরু হয়েছে। সেদিন ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও মো. শাহজাহান। ১৩ মে (সোমবার) জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকালে গণঅধিকার পরিষদ (নুরুল হক নুর) ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, জানান শায়রুল কবির খান।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম দিনের কর্মসূচিতে জামায়াত অংশ নিলেও মালিবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দীর্ঘদিন যুগপৎ থেকে বিরত থাকে জামায়াত। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবরে উভয় দলের দুই অন্যতম শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর ২৮ অক্টোবর বিএনপির পাশাপাশি মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় সমাবেশ করে জামায়াত। ২৮ অক্টোবর বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দিলেও জামায়াতের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় নির্বিঘেœ। চলতি বছরের রমজানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান একই ইফতারে অংশ নেন।
২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ১২ দলীয় জোটের ইফতারে জামায়াতের আমির তারেক রহমানের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের প্রধান নায়ক তারেক রহমানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জাতিকে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্দোলনে আমাদের পরাজয় হয়নি, যারা ভোট ছিনতাই করেছে তাদের পরাজয় হয়েছে।’ এ সময় সহাস্য জবাব দেন তারেক রহমান, ইফতারের হলরুমজুড়ে ওঠে হাততালিও।- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com