হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। এটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর কাবাগৃহের হজ করা হলো মানুষের ওপর ফরজÍযার সামর্থ্য আছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে তা মানে না, (জেনে রেখো) আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুর পরোয়া করেন না। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
হজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, হজে মাবরুর (মকবুল হজ) । (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯১৫১)
হজ অতীতের সব গুনাহ মুছে দেয়: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণ পূর্ববর্তী সব অন্যায় মিটিয়ে দেয়। হিজরত আগের গুনাহ মিটিয়ে দেয় এবং হজও আগের সব পাপ মুছে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২১)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা, সহবাস ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানি (রহ.) বলেন, কোনো ধরনের গুনাহ ছাড়াই নিষ্পাপ হওয়ার উদ্দেশ্য হলো সগিরা ও কবিরা (ছোট ও বড়) সব গুনাহ মাফ করা হবে। (ফাতহুল বারি, খ–৩, পৃষ্ঠা-৩৮২-৩৮৩)
বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও নারীদের জিহাদ হলো হজ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও নারীদের জিহাদ হলো হজ ও ওমরাহ।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯৪৫৯; আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৩৫৯২)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না? তিনি বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিহাদ হলো হজÍহজে মাবরুর (মকবুল হজ)। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ ছাড়ব না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬১)
অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের (নারীদের) জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরুর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২০)
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও গুনাহ মাফের আমল: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজ ও ওমরাহ পালনে ব্রত হও। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও পাপ মোচন করে, যেমন কামার লোহা থেকে মরিচা দূর করে।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৮১৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজ ও ওমরাহ একসঙ্গে করো। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহকে দূর করে, যেমন হাপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপার মরিচা দূর করে এবং হজে মাবরুরের বিনিময় হলো জান্নাত। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
হজে ব্যয় করার ফজিলত: আবু জুহাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজে ব্যয় করা আল্লাহর পথে ব্যয় করার সমান, (যার সওয়াব) ৭০০ গুণ পর্যন্ত। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩০০০)
হাজিদের দোয়া কবুল করা হয়: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যাঁরা হজ ও ওমরাহ পালন করেন তাঁরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাআলা তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করেন, তাঁদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁদের সুপারিশও কবুল করেন। আর তাঁদের সওয়াব হাজার গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ (আখবারু মক্কা লিল ফাকিহি, হাদিস : ৯০২)
অন্য হাদিসে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর পথে মুজাহিদ এবং যারা হজ ও ওমরাহ পালন করে তারা আল্লাহর মেহমান। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩)
হজ না করার পরিণাম ও কঠোর হুঁশিয়ারি: হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সামর্থ্যবান হওয়ার পরও যদি হজ না করে তাহলে সে ইহুদি হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহ তাআলার) কোনো ভাবনা নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে (কাবা) যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য ও ফরজ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭) (তিরমিজি, হাদিস : ৮১২)
আবদুর রহমান ইবনে গনম (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে তবু হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল নাকি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খ–২, পৃষ্ঠা-৭০)
ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘আমার ইচ্ছা করে সেই সব শহরে কিছু লোক পাঠাতে, তারপর তারা সেই লোকদের তদন্ত করবে, যারা তাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করেনি, তারপর তাদের ওপর কর (জিজিয়া) আরোপ করবে। (কারণ) তারা তো মুসলমান নয়, তারা তো মুসলমান নয়।’ (আস-সুন্নাহ লি আবি বকর বিন খাল্লাল, খ–৫, পৃষ্ঠা-৪৪) মহান আল্লাহ আমাদের হজে মাবরুর নসিব করুন। আমিন। লেখক : উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, জামিয়া ইসলামিয়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম