প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের স্লোগান ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট ঘোষণা করেন। এবার বাজেটের আকার ছোট রাখা হয়েছে। কমিয়ে আনা হয়েছে বাজেট ঘাটতিও। আকার ছোট রেখে ঘাটতি কমিয়ে আনলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেটে ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।
বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সরকার একটি কঠিন সময়ে বাজেট পেশ করেছে। আকার ছোট করা হয়েছে। এটা ভালো দিক। তারপরও বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার কারণে মুদ্রা বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সুদের হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও তারল্য সংকট।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমবে যদি সরকার তার নীতিতে অটল থাকে। হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা একটি ভালো দিক। তবে এর প্রকৃত ফল নির্ভর করবে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর। যাদের জন্য এই বরাদ্দ দেওয়া হবে, তারা যথাযথভাবে পেলে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাজেটের আকার ছোট রাখা হয়েছে এটি একটি ভালো দিক ছিল। তবে, প্রকৃতপক্ষে বাজেটে তেমন কিছু নেই। এই বাজেটে সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কোনও কিছুই নেই। ব্যয় কমিয়ে, মূল্যস্ফীতি কমানোর মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়ন করা যেত। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’ বাজেটে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অপদ্রর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের লেভেল প্লেয়িং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান রাখা উচিত। যেখানে সাধারণ মানুষের আয়কর ৩০ শতাংশ, সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ করা ঠিক হয়নি। তাতে সাধারণ মানুষ আয়কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সুদহার অনেক বেড়েছে, আরও বাড়বে। এক্সচেঞ্জ রেটও সঠিক জায়গায় নেই। সুদহার ও এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাজেটে ব্যাংকিং সেক্টরের রিফর্ম, এনবিআরের রিফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত থাকলে আরও ভালো হতো। এই বাজেটে সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কোনও কিছুই নেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে এবং মানুষ আরও দরিদ্র হবে। আর দুর্নীতিবাজরা টাকা পাচার করতে থাকবে।
তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ওপর কর বসানো হয়েছে। এটা ডিজিটালাইজেশনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ বাজেট অর্থনীতিকে আরও নিচের দিকে টেনে নামাবে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সাধারণ জনগণ আরও কষ্টে থাকবে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আমি খুবই হতাশ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে লুটের নতুন পরিকল্পনা করা হয়েছে : জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ এখন লুটেরাদের কবলে। এই বাজেটও হয়েছে লুটেরাদের জন্য। বাজেটে নতুনভাবে লুটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত তথাকথিত বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। আয়ের যেসব খাত দেখানো হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে এই বোঝাটা পড়বে এবং ব্যয় মেটানোর জন্য যা করবে সেটাই সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ এই বাজেট হলো বিদেশ থেকে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যাংক থেকে ঋণনির্ভর। সবটাই গিয়ে পড়ছে মানুষের ওপর। তিনি আরো বলেন, বাজেটের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এখানে কর্মসংস্থান তৈরির মতো কোনো নির্দেশনা নেই। পুরো বাজেটটি মেগা প্রকল্পের এবং মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য করা হয়েছে। সুতরাং এটি শুধু তথাকথিত গণবিরোধী নয় এটি বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এসব বলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ এই বোঝা আর টানতে পারছে না। একদিকে চরম মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা তাদের জন্য সহনীয় না। কয়েকদিন আগেই পেট্রোল-ডিজেল, বিদ্যুৎ এসব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বাজেটের পর আবারো এসবের দাম বাড়বে। আইএমএফের সাথে চুক্তির ফলে প্রতিবছর চারবার করে দাম বাড়বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে বাড়তি পয়সা আমরা কী জন্য দিচ্ছি? বিদ্যুৎ খাতে যে চুরি হয়েছে সেটা সবাই জানে। কুইক রেন্টাল থেকে শুরু করে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনাসহ সবগুলোই তাদের (সরকার) পকেট ভারী করেছে। কই রূপপুর প্ল্যান্ট তো আর এগোচ্ছে না। কোথায় গেল পায়রা বন্দর, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজগুলো?’ তিনি সরকারের সমালোচনায় বলেন, কোন রাস্তায় আপনি সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করছেন? মানুষ তো আর পারছে না। বহু মানুষ কিন্তু শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। কারণ তারা ঢাকা শহরে আর টিকতে পারছে না। আর গ্রামে গিয়েও বিপদে পড়ছে যে সেখানে কর্মসংস্থান নেই।
বৈধ আয় এবং কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা ন্যায়ভাবে আয় করে তাদের ওপরই তো পুরো চাপটা পড়ে। অন্যায়কারীদের জন্য কিছু হয় না। দেখুন না, কি করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ করে? সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান কী করে এত সম্পদ তৈরি করে? এখানে তো গেল দুটো ঘটনা। এমন অনেক ঘটনা আছে। চারদিকে তাকালেই দেখবেন। এই যে, মালয়েশিয়ায় কর্মীরা যেতে পারল না। এটা সুশসানের অভাব এবং সরকারের চরম ব্যর্থতা। এখানে সরকারের ৪/৫ জন সংসদ সদস্য জড়িত। কোথায় যাবে মানুষ? তাদের দাঁড়াবার জায়গা নেই। জনগণের সরকার ও জবাবদিহিতা না থাকলে এই অবস্থায় তো হবে।’তিনি বলেন, ‘এই সংসদ তাদের। তারাই সরকারি দল, তারাই বেসরকারি দল। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে এটি হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম একজন সংসদ সদস্য বেনজীরের ওপর আলোচনা শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। তার মানে সেখানে জনস্বার্থে কোনো কিছু বলা যাবে না। শুধুই স্তুতি আর স্তুতি।’
প্রস্তাবিত বাজেট দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না: ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে ৬ জুন ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করেছেন সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পুনরায় ক্ষমতা দখল করেছে। ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকার ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নির্ভর বিশাল আকারের কল্পনা বিলাসী যে অবাস্তব বাজেট পেশ করেছেন, তাতে দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। গত বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের মাধ্যমে এবং বিদেশে অর্থপাচারের ব্যবস্থা করে ও দুর্নীতিবাজদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার পরিবর্তে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এবার ব্যয় বেড়েছে ৮২ হাজার ৫ শত ৮২ কোটি টাকা। বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে চলতি সংশোধিত বাজেট থেকে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি আহরণ করতে হবে, যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীবিদগণ। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকী ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয় সীমা গত বছরের মতই রাখা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। বেশি আয়ের লোকদের আয়করের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের কর অবকাশ ও ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা সংকুচিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পাশাপাশি এসি ও এলইডি তৈরির উপকরণ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসি ও টিভির মূল্যসহ বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ভোক্তার খরচ বৃদ্ধি পাবে। বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব পরিসংখ্যান ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করেছেন তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা সমাধানের বাস্তব কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বর্তমান সরকার গত ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিল তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে লুটপাট করেছে। ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচার, শেয়ারবাজারসহ অর্থনৈতিক খাতে দুর্নীতি রোধকল্পে বাজেটে কোনো দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তিন বছর আগে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণ ছিল ১ লক্ষ টাকা। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের জুন মাসে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। যার সুদ দিতে হবে প্রতি বছর সোয়া লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে দেশী ও বিদেশী ঋণ এবং তার সুদ দ্বিগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বাংলাদেশে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে প্রায় ১১ শতাংশ, যা দেউলিয়া রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার চাইতেও বেশি। প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০০৬ সালের চাইতেও কম।
তিনি বলেন, বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আগামী অর্থবছরে তা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ১৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী অর্থবছরে তা আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রফতানি আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিদেশী রেমিটেন্স সবকিছুতেই নি¤œগামী ধারা ক্রমশ বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫০টি দ্রব্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর এবং ভ্যাটের আওতা আরো বাড়িয়ে দরিদ্র জনগণকে শোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে চিকিৎসা খাতে চলছে ভয়াবহ অরাজকতা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সেবার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। বিশেষায়িত বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশের শুল্ক বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবার মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে জনগণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ককর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপের একটি বাজেট মাত্র। এই বাজেট দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করছে।