জামালপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিতে ইতোমধ্যেই জেলার যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরামসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেল থেকে যমুনা নদীর বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, কুলকান্দি, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, মাহমুদপুর, নাংলা, কুলিয়া এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার চর পাকেরদহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকায় যাতায়াতের জন্য স্থানীয় রাস্তাগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে। বন্যার কারণে মানুষের বাড়ি ঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা পরিবারের সদস্য ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কাঠারবিল এলাকায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের ৩০ মিটার অংশ বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পাররামরামপুর, চর আমখাওয়া, ডাংধরা ইউনিয়ন এবং পাশের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি ও রাজিবপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। এ ছাড়া একই উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কে একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেসে যাওয়ায় খোলাবাড়ি ও গাইবান্ধা জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৭৫ সেন্টিমিটার বেড়ে আজ বিকেলে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এবার মাঝারি আকারের বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ উপজেলার মোট ১১টি ইউনিয়নের মিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় ১০০ পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় জেলার সাত উপজেলায় ৩০০ মেট্রিক টন চাল ও তিন হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। জামালপুরের জেলা প্রশাসক মাঃ শফিউর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে সকল বিভাগের সাথে জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠক হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি সেক্টর যার যার অবস্থান থেকে যথাযথভাবে কাজ করছেন।