শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

বুলেটের আঘাত কেড়ে নিয়েছে পরিবারের হাসি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪
 স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে গুলিতে নিহত দুলাল মাহমুদ

দারিদ্র্য মাড়িয়ে সুখের মুখ দেখেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ (৩৮)। বাড়ি করার জন্য গ্রামে কিনেছিলেন একটুকরো জমি। বাবা-মা, স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে পেতেছিলেন সুখের সংসার। তবে সেসব আজ শুধুই স্মৃতি। বুলেটের আঘাত কেড়ে নিয়েছে গোটা পরিবারের হাসি। ছেলে আর বাড়ি ফিরবে না, ডাকবে না ‘মা’ বলে। এ কথা মনে করতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা জলেখা বিবি। তিনি বিচার চান ছেলে হত্যার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুলাল মাহমুদের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার চরখাগুটিয়া চৌকিদার কান্দি এলাকায়। সিদ্দিক খালাসী ও জলেখা বিবির সাত সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ছোটবেলা থেকেই দারুণ অর্থকষ্টে দিন কেটেছে তাদের। একদিকে বাবা কুষ্ঠরোগী, অন্যদিকে গরিব হওয়ায় ছোটবেলা থেকে কাজ শুরু করেন দুলাল। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কখনো চালিয়েছেন ভ্যান, আবার কখনো কৃষকের কাজ করেছেন তিনি।
২০০১ সালে পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন দুলাল মাহমুদ। পরে ভাতের অভাবে গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান মুন্সীগঞ্জ জেলায়। সেখানে একটি বাড়িতে লজিং থেকে শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক। এরপর ঢাকায় শুরু করেন চাকরির সন্ধান। ১৪ বছর আগে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে চাকরি হয় তার। সুদিন ফিরে আসে। ৮ বছর আগে বিয়ে করেন। বর্তমানে তার সংসারে ৭ বছরের আদিয়াত ও সাড়ে তিন বছরের আরিশা নামের দুটি সন্তান রয়েছে।
গত ১৮ জুলাই বিকেল থেকেই ঢাকার আজিমপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিলো। এদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন দুলাল মাহমুদ। বাসার সামনে গলির মাথায় আসতেই হঠাৎ করে এক ঝাঁক রাবার বুলেট এসে বিদ্ধ করে তার হাত আর পেটের অংশে। মুহূর্তেই সব শেষ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুলাল। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে স্থানীয়রা ছুটে যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর পরেরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় চির দিনের মতো ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরে গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
দুলাল মাহমুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার কিনে রাখা একখ- জমির পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। মা জলেখা বিবি তজবি জপে ছেলের জন্য দোয়া করছেন। ছেলের শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন বাবা সিদ্দিক খালাসীও। সন্তান দুলাল মাহমুদের এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মা জলেখা বিবি। তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তার।
জলেখা বিবি বলেন, ‘ছোটবেলা থিকা পোলারে দুইডা টাকা দিতে পারি নাই। নিজে বদলা দিয়া, মানুষের দোকানে কাম কইরা পড়ালেহা করছে। এহন সে চাকরি পাইছে। কিন্তু আমার নির্দোষ পোলাডারে মাইরা ফেললো। আমার বুক খালি কইরা, আমার নাতি-নাতকুর দুইডারে এতিম বানাইয়া দিলো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
ছোট ভাই জসিম খালাসী বলেন, ‘টাকার অভাবে আমরা ভাইয়েরা পড়াশোনা করতে পারি নাই। দুলাল ভাই নিজে পড়াশোনার জন্য ভ্যান চালাইছে, মানুষের বাড়িতে কাম করছে। তিনিই আমাগো দেইখা রাখতো। আজ তিনি আর নাই। আমাদের একটাই দাবি ভাইয়ের পরিবারটির পাশে যেন সরকার দাঁড়ায়।’
কোয়েল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দুলাল ভাই কখনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। এমনকি বেশি মানুষের ভিড় কিংবা আড্ডা পছন্দ করতেন না। আমরা শুনেছি, ওনি অনেক কষ্ট করে এই অবস্থানে এসেছেন। তাদের বাড়ি থেকে বর্ষায় রাস্তায় আসতে পানি পড়ে। তিনি গামছা পড়ে পানি পাড় হয়ে, জামাকাপড় পরিবর্তন করে স্কুলে যেতেন। খুব মেধাবী ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।
পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা ওকে কখনো দেখিনি রাজনীতি করতে বা কারো সাথে উচ্চ বাক্যে কথা বলতে। ভীষণ গরীব পরিবারের সন্তান ছিলো দুলাল। আমাদের স্কুল থেকে পাশ করার পর একপর্যায়ে শুধু ভাতের অভাবে, পড়াশোনার জন্য মুন্সিগঞ্জে চলে যায়। সেখানে লজিং মাস্টার থেকে পড়াশোনা শেষ করে, এখন একটা ভালো অবস্থানে এসেছিলো। হঠাৎ করে এমন ঘটনা আমাদের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা চাই সরকার পরিবারটির পাশে দাঁড়াক।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের প্যানেল আইনজীবী রওসন আরা বলেন, জাজিরার দুলাল মাহমুদ ঢাকায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় গুলিতে নিহত হয়েছেন। তার পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবা আর দুটি সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। এই অবস্থায় কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি বিপাকে পড়েছেন। আমরা চাই সরকার পরিবারটির পাশে দাঁড়াক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com