বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’। আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সকাল থেকে অবস্থান নেন চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটার, গণমাধ্যমসহ দৃশ্যমাধ্যমের বিভিন্ন শাখার শিল্পী ও কর্মীরা। সেই দলে ছিলেন ঢালিউড তারকা সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ভাই ও বোনগুলো মারা গেছেন, দেখবেন, আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন, তবে আপনি ঘুমাতে পারবেন না। যে ভাইটা মারা গেলো, আমার কানে এখনো বাজে তার কণ্ঠ ‘কারো পানি লাগবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে মারা যান মীর মুগ্ধ। মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগেও আন্দোলনকারীদের জন্য পানি নিয়ে ছুটছিলেন এই ফ্রিল্যান্সার। তিনি বলেছিলেন, ‘কারো পানি লাগবে?’ অনেকের মতো মুগ্ধর সেই তৎপরতা ভুলতে পারেননি অভিনেতা সিয়াম আহমেদও। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমরা যারা বিনোদনশিল্পে কাজ করি, মানুষের জন্যই কাজ করি। ইন্ডিভিজুয়াল কাউকে দেখানোর জন্য কিন্তু আমরা কাজ করি না। ছাত্ররা, ইয়াংরা আমাদের প্রধান অডিয়েন্স। তাদের সঙ্গে যদি আমরা না দাঁড়াতে পারি, তাহলে আমরা কেন কাজ করলাম। তাহলে এই কাজ না করে অন্যকিছু করা ভালো। আমার নিজের বাচ্চা আছে। আমি জানি আজ থেকে ১০ বছর পরে ১৫ বছর পরে সে এ ব্যাপারে জানবে এবং আমাকে প্রশ্ন করবে, তুমি কী করেছ? তখন আমি বুক উঁচু করে বলতে চাই, কিছু করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন অনেক শিল্পী। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফার্মগেট এলাকায় এ বিক্ষোভে জড়ো হতে থাকেন তারা। বিক্ষুব্ধ শিল্পীদের কণ্ঠে শোনা যায় বৈচিত্র্যপূর্ণ স্লোগান, ‘ভয়হীন-ন্যায্য-মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ চাই’, ‘সব হত্যাকা-ের বিচার করো’, ‘হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ কর’। সেখানে সিয়াম বলেন, ‘এই বাচ্চাগুলো কোনো অযৌক্তিক দাবি করেনি যে তাদের এভাবে প্রাণ হারাতে হবে। বাবা-মার আহাজারি দেখছি, যে হারিয়েছে, সে জানে এর বেদনা! এ হত্যার বিচার যতদিন না হবে, ততদিন বাংলাদেশের কোনো মানুষ শান্তি পাবে না।’ এর আগে ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’র ব্যানারে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেফতার হয়রানির প্রতিবাদে এবং সব হত্যার হিসাব ও বিচার করা, গুলি ও সহিংসতা বন্ধ, গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে দাঁড়াতে যাচ্ছি। অবিলম্বে সব হত্যাকা-ের বিচার ও হত্যা, সহিংসতা, গণগ্রেফতার হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যে ন্যায্যতা, সমতা ও মানবিক মর্যাদার অঙ্গীকার নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা ভয়হীন, ন্যায্য, মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ চাই।
‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’র ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নূরুল আলম আতিক, আকরাম খান, পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, সৈয়দ আহমেদ শাওকি, ওয়াহিদ তারেক, রেদওয়ান রনি, আমিরুল রাজিব, শঙ্খ দাশগুপ্ত, হুমাইরা বিলকিস, তানিম নূর, জাহিন ফারুক আমিন, তানভীর আহসান, ইয়াছির আল হক, নাসিক আমিন, ধ্রুব হাসান, অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাধন, নুসরাত ইমরোজ তিশা, সাবিলা নূর, তাসনিয়া ফারিণ, আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফ, তাসলিমা আকতার লিমা, শিল্পী ঋতু সাত্তার, তানজিম ওয়াহাব, কণ্ঠশিল্পী শিবু কুমার শীল প্রমুখ।