শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

গুলিতে খুলি ফুটো হয়ে যায় ইমরানের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪

৩ আগস্ট, শনিবার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়করা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। পরদিন রোববার সারা দেশে একযোগে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে। চারদিকে মানুষের ঢল। জনতার সঙ্গে সেদিন রাজপথে নেমে আসেন জামালপুরের ইমরান। ২২ বয়সী এ তরুণ পড়াশোনা করেন মাহমুদা বেলাল বিএম কারিগরি কলেজে। দুই ভাই ও এক বোনসহ পাঁচজনের পরিবার। ইমরানের বাবা রিকশাচালক। বাবার একার পক্ষে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই কাজের সন্ধানে ইমরান ঢাকায় আসেন। ওঠেন আশুলিয়ার বাইপাইলে ফুফুর বাসায়। লক্ষ্য ছিল ফুফাতো ভাই ও পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে গার্মেন্টসে একটা চাকরির ব্যবস্থা করা, যাতে বাবার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরা যায়। কিন্তু সব স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যায়। ৪ আগস্ট পুলিশের গুলি ইমরানের মাথা ভেদ করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমরান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশপাশের মানুষ ও ইমরানের ফুফাতো ভাইয়েরা মিলে নিয়ে আসেন হাসপাতালে। ইমরান এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি
ওয়ার্ডের ২০১ নম্বর কক্ষে ভর্তি রয়েছেন। রঞ্জনরশ্মিতে দেখা যায়, তার মাথার খুলিতে তিনটি ফুটো রয়েছে। ঢামেক হাসপাতালে আনা হলে তাকে অপারেশন করানো হয়। আঘাতপ্রাপ্ত মাথার খুলি খুলে রেখে চিকিৎসার সুবিধার্থে দেয়া হয় প্লাস্টিক।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক চিকিৎসক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইমরানের চিকিৎসার সুবিধার্থে খুলির আঘাতপ্রাপ্ত অংশ খুলে ফেলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ডিকম্প্রেসিভ ক্র্যানিওটমি বলা হয়। খুলির আঘাতপ্রাপ্ত হাড্ডি খুলে রাখা হয়েছে মস্তিষ্ক জাগানোর জন্য। না হলে মস্তিষ্কের চাপে সে যেকোনো খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে। এখন মস্তিষ্ক কিছুটা জেগে উঠেছে। যখন সেটা আস্তে আস্তে নিচের দিকে বসে যাবে, তখন আমরা খুলির হাড্ডি লাগিয়ে দেব। এটা তিন মাস পর্যন্ত সময় লাগে। তিন মাসের আগে করা সম্ভব হয় না। আশার দিক হলো, তার মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে কাজ করা শুরু করেছে। এভাবে উন্নতি হলে আমরা তিন মাস পর তার খুলি প্রতিস্থাপন করতে পারব। আমরা আশা করছি, তিনি একসময় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। তবে কবে কখন আসবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না।’ সন্তান ও পরিবারের অবস্থা জানতে চাইলে ইমরানের বাবা বিল্লাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। জামালপুরে আমি রিকশা চালাই। কিন্তু এ উপার্জন দিয়ে পরিবারের খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বড় ছেলেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তখন গাড়ি বন্ধ। তবু রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। রাস্তায় মাঝে মাঝে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করেছিল। কিছু পথ রিকশা ও কিছুটা অটোরিকশায় এসে নেমে যেতে হয়ে। পরে অনেকটা পথ হেঁটেই ঢাকায় পৌঁছি। এসে দেখি, ছেলের মাথায় ব্যান্ডেজ ও সেলাই।’
ইমরানের বাবা আরো বলেন, ‘আমার প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, তাতে একটুও দুঃখ নেই। আমার ছেলেটা যদি সুস্থ হয়! আশঙ্কামুক্ত হয়, তাতেই আমার ভালো লাগত। ওর মাথার খুলি ফুটো হয়ে গেছে। প্লাস্টিক আছে ওর মাথায়। ডাক্তার বলছেন, আমার ছেলে সুস্থ হলেও স্বাভাবিক হবে না সহজে। অস্বাভাবিক আচরণ করবে, পাগলামি করবে, কাউকে মারতে যেতে পারে। আমার ছেলে সহজে সুস্থ হবে না, এটা আমার জন্য কষ্টের।’ কথা হয় ইমরানের মা নাজমার সঙ্গে। সন্তানের পাশে বসে তিনি শুশ্রূষা করছিলেন। কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘আমার ছেলে কথা বলতে পারে না। মুখ খুলতে পারে না। মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতে পারে না। তার চোখে রক্ত ভাসছে। নাক দিয়ে তাকে খাবার গ্রহণ করাতে হয়। সন্তানকে এভাবে দেখলে মায়ের মন ঠিক থাকে না। আমার সন্তান কবে পুরোপুরি সুস্থ হবে তাও জানি না। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’
আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীর নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের নামকরণের দাবি:
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নতুন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের’ নামকরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীরের কাছে আবেদনটি জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নতুন একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে “শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন” করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের নাম পরিবর্তন করতে হলে সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের প্রয়োজন। নতুন উপাচার্য যোগ দেওয়ার পর সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উঠবে। আশা করা যাচ্ছে, তখন বিষয়টি অনুমোদিত হবে।
এদিকে কোষাধ্যক্ষের কাছে আবেদন জমা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নতুন একাডেমিক ভবনের ফটকে ‘শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন’ লেখা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়।
ইকরামুল হক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর সহপাঠীরা জানান, ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে মারা যান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com