বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, যাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই সকল শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের কষ্ট ও কলিজা ছেঁড়া আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে আমরা একটি মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। রাষ্ট্রীয় সকল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অপশক্তি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী ৫২- এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান ছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে। ছাত্রদের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যর্থ করার সকল রকম অপচেষ্টা করেও এই জুলুমবাজ ফ্যাসিস্ট সরকার পার পাইনি। ৫ আগস্ট লক্ষণ সেনের মতো পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শনির আখড়াই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুর রহিম জীবন।
আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা সাদেক বিল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, শাজাহান খান, মীর বাহার আমিররুল ইসলাম, জুনায়েদ ইসলাম, মাওলানা বায়জিদ হাসান, আবুল হোসেন, নওশাদ আলম ফারুক, মিজানুর রহমান মালেক, অ্যাডভোকেট শাফিউল আলম, আহমেদ রাসেল, মির্জা হেলাল, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আমান উদ্দিন আমিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জুলুম নির্যাতন চালিয়ে এদেশকে বসবাসের অযোগ্য ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে বিচারের নামে অবিচার শুরু করেছিল। তারা জুডিশিয়াল কিলিং -এর মাধ্যমে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। ১৬ বছরের শাসনামলে জামায়াতের ৫০০ জন নেতাকর্মীকে শহীদ করেছে। ২০ হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানাকে অরক্ষিত করে সীমান্তে ফেলানীর মতো লাশ উপহার দিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশপ্রেমিক শক্তির মাধ্যমে সাংবিধানিক ও গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বলেন, বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ৫ আগস্ট থেকেই দুর্বৃত্তদের লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজির প্রতিরোধ এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো উপাসনালায়সহ দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার এই ঐতিহাসিক বিজয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। এদেশের জনগণ এখন সজাগ ও সচেতন রয়েছে কোনো কূচক্রী মহলের আর কোনো দেশ বিরোধী এজেন্ডা আর বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সাথে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের সকল মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন। মা-বোনেরা ঘরে বসে থাকতে পারেনি। তারা আন্দোলনকারীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশে জুলুমতন্ত্রের অবসান হয়েছে। আওয়ামী গু-া ও আত্মস্বীকৃত পুলিশ অফিসারদেরকে বিচার করতে হবে। সকল খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, এই জাতিকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জুলুম এবং শোষণ করে একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে রাখা হয়েছিল। মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার ছিল না, জীবনের নিরাপত্তা ছিল না, নিজ ঘরের মধ্যে থাকলেও খুন করা হতো। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আবার নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন দেশ বিনির্মাণে সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি