ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের চিত্রা নদীর উপর ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ব্রীজটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই ব্রীজ ব্যাবহার করে স্থানীয় জনগনের শহরের ব্যস্ততম এলাকায় নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করার কথা থাকলেও বর্তমানে ব্রীজটি যেন পরিণত হয়েছে বাজারে। এই ব্রীজের দুপাশের অনেকটাই চলে গেছে হকার ও ভ্রাম মাণ দোকানিদের দখলে। ফলে শহরের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। শহরের জনতা মোড় থেকে শুরু করে কালীবাড়ি তেমাথা পর্যন্ত রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার এবং ট্রাফিক না থাকায় সড়কের এই অংশে ব্যাপক জানজট লেগে থাকে যে কারণে প্রতিনিয়ত ব্রীজটি ব্যবহারকারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর এবং হাটবারের দিনগুলোতে ব্রীজ ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ চরমে যেয়ে পৌঁছায়। এমনকি ব্রীজটির পূর্ব পাশে চিত্রা নদীর মধ্যে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে দুইটি মাংস বিক্রির অবৈধ দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এই দোকানের ক্রেতারা ব্রিজের পাশে নির্মিত ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে মাংস কেনার কারণে অনেকক্ষেত্রে পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে না। সরোজমিনে যেয়ে দেখা যায়, চিত্রা নদীর উপর নবনির্মিত ব্রীজটির পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে ফুটপাত থাকলেও হকার এবং স্থায়ীভাবে মাংসের দোকান করার কারণে সাধারণ পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছেন না। ব্রীজের উত্তর এবং দক্ষিণ দুই পাশেই হকাররা দোকান বসিয়েছেন। কেউ ভ্যানের উপরে, কেউ আবার ব্রীজের উপরেই দোকানের মালামাল সাজিয়ে করছেন বেচা বিক্রি। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের দোকান, জুতা সেলাই ও কালী করার দোকান, পাটির দোকান ইত্যাদি।এ সময় লক্ষ করা যায়, দক্ষিণপাশে স্থায়ীভাবে করা দুটি মাংসের দোকান দেওয়ার ফলে ব্রীজের পূর্ব পাশের ফুটপাতটি ব্যবহারে জনসাধারণের ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ব্রীজের উপর আনারসের পরসা সাজিয়ে বসা ফল বিক্রেতা আমিনুরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ব্রীজের উপর ক্রেতা সাধারণের চলাচল বেশি থাকে। যে কারণে অল্প সময় বেচা বিক্রিও ভালো হয়। তাই অস্থায়ীভাবে দোকান সাজিয়ে মাল বিক্রি করি। ব্রীজের উপর দোকান বসানো এবং ব্যবসা পরিচালনা করার নিয়ম আছে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। রিকশা চালক আনসার আলী জানান,আগে এত যানজট ছিল না। ব্রীজ চালু হওয়ার পরেই যানজট বেশি হয়েছে। ব্রীজের উপর আশেপাশে অনেকেই দোকান দিয়ে বসেছে। যে কারণে রাস্তা চিকন হয়ে গেছে। হলে চলাচলে আমাদের কষ্ট হয়। এদিকে কালিবাড়ি মোড় ওদিকে জনতা মোড় অব্দি যে যেভাবে পারে সেভাবে আগে যাওয়ার জন্য গাড়ি ঢুকিয়ে বসে থাকে। প্রতিদিন ব্রীজ এবং ব্রীজ সংলগ্ন সড়ক ব্যবহার করা স্থানীয় একজন বাসিন্দা সাব্বিরুল ইসলামের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, নির্বিঘ্নে জনগণের চলাচলের জন্য চিত্রা নদীর উপরে নব নির্মিত ব্রীজটির সৌন্দর্যই নষ্ট করে দিয়েছে অবৈধভাবে দখল করা হকার এবং মাংসের দোকানদাররা। এতে করে সর্বসাধারণের চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, একই সাথে তীব্র যানজটে নাকাল হয় সাধারণ মানুষ। যে কারণে কোনো অবস্থাতেই এটা হতে দেওয়া যেতে পারে না। অতিসত্তর পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট ব্রীজের উপর বসা হকার এবং স্থায়ীভাবে মাংসের দুইটি দোকান অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। কালিগঞ্জ পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, ব্রীজের দুপাশে এবং উপরে দোকান বসানোর কারণে মানুষ ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।যা খুব দুঃখজনক। আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার অবৈধভাবে ব্রিজের উপর বসা হকার বা অস্থায়ী দোকানদারকে অপসারণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।ইদানিং ব্রিজ সংলগ্ন কালিবাড়ি মোড় এবং জনতা মোড় এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। এই দুই মোড়ে অতিসত্তর ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা দরকার। তাই আমি মনে করি পৌর কর্তৃপক্ষকেই এই ব্যাপারগুলোতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, শহরের মধ্যে অবস্থিত চিত্রা নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ ও ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার উপর হকারদের দোকান সাজিয়ে বসা এবং স্থায়ীভাবে বসা দুটি মাংসের দোকানের ব্যাপারে পৌর প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করবো এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী অতি সত্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।