আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘গত ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে একরকম সম্পর্ক ছিলো, এখন সেটা অন্যরকম। এটাই হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতার নিরিখেই আমাদের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে হবে এবং সেটা কন্টিনিউ করে যেতে হবে।’ গতকাল শনিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভারত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে সেটা অবশ্যই উপলব্ধি করবে। ইতিমধ্যে হয়ত ভারত সেটা করছেও।’
ভারতে সঙ্গে বর্তমানে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা তো আছে কিছু। সেটাতে সন্দেহ নেই। পূর্ববর্তী সরকার, অর্থাৎ ভারতের যেসব উদ্বেগ ছিলো। সেটা দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা তারা করেছে। আমাদেরও কিছু কনসার্ন ছিলো, আছে। একই সঙ্গে আমাদের কনসার্নগুলো যদি মিট করা হতো ঠিকমতো তাহলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে যে দোলাচল সেটা থাকতো না। কিন্তু মোটাদাগে আমরা যেটা দেখতে পাই যে, আমাদের যে কনসার্ন ছিলো, সেগুলো ওইভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সম্পর্ক তো একদিনের, এক বছরের বা এক যুগের না। এটা বেশি সময়ের ব্যাপার। সবসময় একরকম যাবে এমনও কথা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী হতে চাইবো। আমরা একটা ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয়।’ সীমান্ত হত্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সবসময় খুব শক্তভাবে বলেছি, এমনকি যখন সামনাসামনি ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তখন বলেছি, এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত যেখানে দু’টি দেশ (বাংলাদেশ-ভারত) যুদ্ধরত নয়, কিন্তু সেখানে মানুষকে গুলি করে মারা হয়।’
দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হলো: বাংলাদেশের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে ভারতে উগ্রবাদি হিন্দু সংগঠনগুলোর আগ্রাসী আন্দোলনের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের সব দূতাবাস ও কূটনীতিকসহ কর্মীদের সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছিল। এর পরেই শনিবার থেকে দিল্লি, কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বেশ কয়েকগুণ বাড়ানো হলো। কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে হিন্দু সংগঠনগুলোর মারমুখী আন্দোলন মোকাবিলায় অতিরিক্ত সতর্কতা ও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন থেকে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনারের নিরাপত্তা ও নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়াও থাকবেন ২ জন ইন্সপেক্টর এবং ৬ জন করে এএসআই ও এসআই পদমর্যাদার অফিসার। নারী ও পুরুষ মিলিয়ে ৩০ জন লাঠিধারী কনস্টেবলও দুই শিফটে মোতায়েন থাকবেন ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে। আগে মাত্র ১২ জন মোতায়েন থাকতেন। এখন থেকে ডেপুটি হাইকমিশনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রবেশ করার ক্ষেত্রে তল্লাশি করা হবে। তাছাড়া ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে ও সংলগ্ন রাস্তাগুলোতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। অন্যদিকে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে পুলিশের র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। হাইকমিশনের সামনে সব ধরনের জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হাইকমিশনের সামনের প্রবেশপথে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতন’ ও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ডেপুটি হাইকমিশনের কাছে চলে এলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানোর পাশাপাশি অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এর পরেই বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়।