শারীরিক প্রতিবন্ধী’র জীবন সংসার চলে একহাতে রিকশা চালিয়ে। পটুয়াখালীর দশমিনার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদুমপুর গ্রামের মৃত জয়নাল হাওলাদারে ছেলে খোকন(৩৬)এর। ৩বছর পুর্বে বাউফল উপজেলার কালাইয়ার দাসপাড়ায় একটি ছোয়ামিলে দূর্ঘটনায় হারায় খোকনের বাম হাত। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য তিনি এখন এক হাতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিবন্ধী ভাতার একটি কার্ডের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও তা পাননি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী নিয়ে একহাতে রিকশা চালাতে দেখা যায় খোকনকে। খোকন বলেন, বাউফল উপজেলার কালাইয়ার দাসপাড়ারা ছোয়ামিলে গাছ কাটার সময় আকস্মিকভাবে আমার এ অবস্থা হয়েছে। এতে বাম হাত সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। এরপর দীর্ঘদিন মিল মালিকের অর্থায়নে চিকিৎসা চলে। এর পরে প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর বাম হাতের অর্ধেকটা কেটে ফেলা হয়। বাম হাত হারিয়ে খোকন হয়ে যান পঙ্গু। ২২ বছর বয়সে খোকন বিয়ে করেন প্রতিবেশী এক দিনমজুরের মেয়েকে। এরপর জীবিকার তাগিদে ভাড়া নিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করেন তিনি। প্রথম প্রম একহাত দিয়ে রিকশা চালাতে কষ্ট হতো। যাত্রীরাও তাঁর রিকশায় ওঠতে ভয় পেতেন। কিন্তু আস্তে আস্তে রিকশা চালানোয় তাঁর হাত পাকা হয়ে যায়। এখন ডান হাতেই তিনি দক্ষতার সঙ্গে রিকশা চালাতে পারেন। উপজেলায় এসে দিনভর রিকশা চালান। শরীর খারাপ থাকলেও রিকশা চালান। খোকনের ঘরে ২ছেলে ২মেয়ে জম্ম নিয়েছে। এতে তাঁর দুঃখ নেই। বড় মেয়ে মানসুরা(১৩) ৮ম শ্রেনিতে ও মেঝ ছেলে সায়েম(১২) ৭ষ্ঠ শ্রেনিতে নেহলগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অধ্যয়নরত। আর সেঝ মেয়ে মারুফা(৯) নেহলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে কাইউম(২)। খোকনের ইচ্ছে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করানোর। যাতে তারা বড় হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালায়া আয় হয় ২৫০ থাইক্যা ৩শ’ টাকা। কিন্তু এই আয় দিয়া সংসার চলে না। আগে প্যাডেল মাইরা রিকশা চালাইতাম। কিন্তু ওই রিকশায় অ্যহন বেশি যাত্রী উঠতে চায় না। তাই আমি এনজিও থেকে ৩০হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত একটা রিকশা কিনছি। এতে শরীরের ওপর কিছুটা চাপ কমছে। কিন্তু আয় বেশি বাড়ে নাই। পঙ্গু হইলেও জীবনতো চালান লাগবে। তাই রিকশার চাকা ঘুরাইয়াই জীবন চালাই। সরকারি ভাতা ভোগীর বই করতে মেম্বারের কাছে কতবার গিয়েও কাজে আসেনি। এ ব্যপারে বহরমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, খোকনের শারীরিক প্রতিবন্ধির ঘটনা আমি জানি। আর ভাতা ভোগী কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কার্ড করে দেওয়া হয়ে।