প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার ‘এক চোখ কানা, এক কান ঠসা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সিইসির কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই যে প্রধান নির্বাচন কমিশন কেএম নূরুল হুদা, উনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও প্রধানমন্ত্রীকে শুধু দেখতে পান। কিন্তু জনগণ, ভোটার, নির্বাচন, নির্বাচনে ভোটডাকাতি, কারচুপি-জালিয়াতি, দিনের ভোট রাতে- এগুলো উনি দেখতে পান না। এগুলো যদি উনি দেখতে পেতেন তা হলে নির্বাচন ব্যবস্থা যে ধ্বংস হয়ে গেছে, ভোটাধিকার যে হরণ হয়ে গেছে, দেশের এ অবস্থাটা আজ হতো না।’
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ফজলুল হক মিলন (বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক) বলেছেন, গতকাল শ্রীপুরে বিএনপির প্রার্থীকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করার মতো অবস্থা করেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে এরা কত বড় কাপুরুষ, এরা কত বড় দুর্বৃত্ত যে সিরাজগঞ্জে একজন নারীকে গুলি করে চোখ অন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু তখনও এত বড় ঘটনায় নির্লজ্জ এ নির্বাচন কমিশনার গুরুত্ব দেননি।’
বিএনপির অন্যতম এই জ্যেষ্ঠ বলেন, ‘কাপড় বিক্রেতা শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি করে, সবজি বিক্রেতা আলো টমেটো বেগুন বিক্রি করে, পতিতা দেহ বিক্রি করে, আর কেএম নূরুল হুদা ‘আত্মা বিক্রি’ করেছেন শেখ হাসিনার কাছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার প্রার্থীরা দেশের সব জায়গার প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকছেন, দুর্বৃত্তরা ঢুকছেন, এসব ঘটনা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। অথচ আত্মা বিক্রি করা এই নির্লজ্জ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটের পর দিন ৩১ ডিসেম্বর লজ্জার মাথা খেয়ে বললেন- ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, সঠিক হয়েছে’।
রিজভী বলেন, ‘যে লোক খারাপ সে সব দিক দিয়ে খারাপ। যে আত্মা বিক্রি করতে পারে যার আত্মা নেই, যে সত্য কথা বলতে পারে না সে টাকাও চুরি করতে পারে। তার কমিশনের বিরুদ্ধে টাকা চুরি করার অভিযোগ করেছে, দেশের ৪১ বুদ্ধিজীবীর এ অভিযোগকে তিনি পাত্তাই দেননি। কারণ বর্তমান সরকারের ক্ষমতাটাই শুধু দরকার আর শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ রকম নির্বাচন কমিশন দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি সার্বভৌম স্বাধীন সংস্থা, তাদের নিজস্ব আইন আছে। নিজস্ব আইনে তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার। কিন্তু কেএম নূরুল হুদা তো শেখ হাসিনার কাছে দস্তখত করেছেন, তিনি তো মুচলেকা দিয়েছেন যে, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেবেন না, তিনি সেটিই করেছেন। এ ছাড়া বিচার বিভাগে কালো মানিকদের মতো লোক বসানো হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করেছেন, আর তার জন্যই তিনি এ লোকদের এত বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন। শেখ হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখতে যা যা দরকার এরা তা-ই করবে। যদি কেউ বিদ্রোহ করে, যদি সত্য কথা বলে, তা হলে প্রধান বিচারপতি সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা) সাহেবের যে পরিণতি হয়েছিল সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে। সেই ভয়ে এখন কেউ আর সত্য বলার সাহস করছেন না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজ আমরা নূরুল হুদার কথা বলছি, তিনি তো শেখ হাসিনার চাকর-বাকরদের নিয়ে বসেছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের হত্যাকারী কে? দেশের শত্রু কে? দেশের সার্বভৌমত্বের শত্রু কে? স্বাধীনতার সর্বশত্রু কে? সুষ্ঠু ভোটের শত্রু কে? শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। তার পদত্যাগ নিশ্চিত করলেই দেশে গণতন্ত্র ফিরবে। সুষ্ঠু ভোট হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কৃষক দল সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, যুবদল মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ও মৎসজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।