উন্নত চরিত্র ও মানবিক গুণে সমৃদ্ধ হলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়। এসব গুণ জন্মগত নয়, অর্জন করে নিতে হয়। আর তা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। জীবনের বাঁকে বাঁকে নানা অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই একজন পূর্ণাঙ্গ মানবে পরিণত হওয়া যায়। সমাজে ভালো মানুষের বিপরীতে থাকে মন্দ মানুষ বা অমানুষ। যারা অমানুষ তারা সবার জন্য বিপজ্জনক। অমানুষ সবার মানবিকীকরণের প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়, ভালো প্রয়াসকে নস্যাৎ করে দেয়। লোভ-লালসা, সাময়িক আনন্দ কিংবা কর্মব্যস্ততার চাপে পড়ে মানুষ অনেক কিছুই ভুল করে বসে। তাই নৈতিকতার আলোচনা ও চর্চা প্রয়োজন। এসব আলোচনা বেশি বেশি হলে মানুষের মধ্যে ভাবান্তর ঘটে। সবাই সংশোধিত না হোক, কিছু মানুষ তো উপকৃত হবেই। জ্ঞানীরা বলেন, একজন খারাপ মানুষের জন্য সমাজের যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয় ভালো ও জ্ঞানী মানুষের নিষ্ক্রিয়তার কারণে। এই সুযোগে মন্দ মানুষগুলো সমাজে নানা তৎপরতা চালানোর সুযোগ পায়। স্নেহ. মমতা, প্রেম, শ্রদ্ধা, ভক্তি, দয়া, সৌজন্য, সৌন্দর্যবোধ, সৌহার্দ্য, সহানুভূতি, সহিষ্ণুতা, ন্যায়নিষ্ঠা, সামঞ্জস্যবোধ, শ্রমশীলতা, অনুসন্ধিৎসা, স্বাধীন চিন্তাশীলতা, জ্ঞানানুরাগ ইত্যাদি অজস্র মানবিক গুণ আছে যেগুলোর ব্যাপক চর্চা-অনুশীলন মানুষের মানব হয়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। আল্লাহর নিরানব্বই নামের বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ নামগুলোর প্রত্যেকটিই গুণবাচক এবং গুণগুলো মানুষেরই গুণ। মানুষের মানব হয়ে ওঠার জন্য এসব গুণের অনুশীলন খুবই ফলদায়ক।
সত্যসন্ধ হওয়া ও বস্তুনিষ্ঠ থাকা একটি মৌলিক মানবিক গুণ। সব নবী-রাসুল কোনো না কোনোভাবে সত্যনিষ্ঠ থাকার উপদেশ দিয়েছেন। অবশ্য সত্যের অনুশীলন কিছুটা ব্যক্তির আওতাধীন হলেও অনেকটাই সমাজ ও রাষ্ট্রের আনুকূল্যের ব্যাপার। সামাজিক প্রথা, পদ্ধতি ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান সত্যের প্রতিকূল হলে ব্যক্তি কতটা পারে? তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা ভালো মানুষের হাতেই ন্যস্ত করা সমাজের প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বদেশ, স্বজাতি, বিশ্ব সম্প্রদায় ও সর্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালন করাও মানবিকতার অন্তর্গত। স্বদেশপ্রেম ও স্বজাত্যবোধ এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ এক না হলেও বিরোধী নয়। একটি আরেকটির পরিপূরক।
সমাজের প্রতিটি সদস্যের নীতিনৈতিকতার কথা দায়িত্বশীলদের ভাবতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে অবক্ষয়ের সমাধান বের করে আনতে হবে। না হয় আগামী প্রজন্ম নৈতিকতা ও মানবিকতা হারিয়ে অনুভূতিহীন প্রাণে পরিণত হবে। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা এখন আর আদব-কায়দার ধার ধারে না। বড়দের সম্মান করাটাও যে নৈতিকতার অংশ, তা তারা ভুলতে বসেছে। দেশীয় কালচার ও ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে তারা যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছে এবং ভিনদেশি কৃষ্টি-কালচারকে আপন করে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলি এখনো একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। মানুষের ভেতর মিটিমিটি জ¦লছে মানব হয়ে ওঠার আকাক্সক্ষা-পিদিম। নানাভাবে সেই আকাক্সক্ষা অভিব্যক্ত হয়। মানবিক গুণাবলির বিকাশের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে মানবিকতার ব্যাপক আলোচনার। তাহলে বিকৃত চিন্তা, সামাজিক অবক্ষয় এবং মানবিক বিপর্যয় তৈরির পথ বন্ধ হবে। সমাজ রক্ষা পাবে নিষ্ঠুরতা ও অসহিষ্ণুতার কবল থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকার করবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৫)