লালমনিরহাটে অধিক লাভের আশায় তামাক চাষের পরিবর্তে আলু চাষে ঝুকে পড়েছে কৃষক।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন দিন তামাকের চেয়ে আলুতে পরিশ্রম ও খরচ কম কিন্তু ল্ভা বেশী হওয়ায় তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলতি মৌসুমে আলু চাষে ঝুকে পড়েছে এ অঞ্জলের কৃষকেরা। আলুর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দামেরও আশা করছেন কৃষকেরা। আলুসহ অন্যান্্য রবি ফসলের লাভ থেকে দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতি হওয়া আমন দানের লোকসান পুষিয়ে নিতে আশা করছেন কৃষকেরা। জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, লালমনরিহাট জেলায় ৪২টি ইউনিয়ন, ২টি পৌরসভা মিলে গত বছর এ জেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে ।এবারে কমে তামাক চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে। তামাক চাষে পরিশ্রম ও খরচ বেশী হওয়ায় বিগত কয়েক বছরেও লাভের মুখ দেখতে পায়নি কৃষক, গুনতে হয়েছে লোকসান। তামাকসহ অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে আলু চাষ করে বিগত কয়েক বছরের তামাক চাষে লোকসান পুষিয়ে লাভের আশায় আলু চাষে ঝুকে পড়েছে কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও আলু চাষ হয়েছে ৫হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। চারদিকে শুধূ আলু ক্ষেতের সমারোহে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে আলু গাছের সবুজের সমারোহ। কৃষি অফিসের পরামর্শে অধিক ফলনশীল জাতের কাটিনা, ডায়মন্ড, উপসি ও স্থানীয় জাতের আলু চাষ করা হচ্ছে। যদিও এখনও পুরোদমে আলু তোলা শুরু হয়নি। তবুও যে সবকৃষক আগাম জাতের আলু চাষ করেছিলেন তারা কিছু কিছু আলু তোলা শুরু করেছেন। আর কিছুদিন পর পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে। তবে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমন কম থাকায় কৃষকরা প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ৩০টন আলুর ফলন পাবেন বলে আশা করছে কৃষকেরা। এ ছাড়াও বর্তমানে বাজারে আলুর চাহিদা ও দাম ভাল থাকায় আলু চাষীরা আলু বিক্রির লাভ থেকে কয়েক দফা বন্যায় আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছেন। কাশিয়াবাড়ী এলাকার কৃষক ইমতিয়াজ আলম বলেন, আমাদের এলাকায় বিগত কয়েক বছরে তামাক চাষ করে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি, আর লোকসান পেতে চাইনা, আলুর ফলন ও দাম দুটোই ভাল তাই আলু চাষ করেছি আশা করছি ভাল ফলন পাবো। তিনি বলেন প্রতি বছর বন্যার পর নদীর তীরবর্তী জমি গুলোতে আলু ভুট্টা সরিসা ও বাদামের ফলন খুব ভালো হয়। এবারে আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি আলুর গাছ দেখে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি। সারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আলু চাষী ফজল বলেন, কয়েকদফা বন্যায় আমন ধানসহ আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে,তবে এবারেও আলুর গাছ আমকে নতুন করে সপ্ন দেখাচ্ছে। বন্যার কারনে নদী তীরের জমিতে পলি পড়ে তাই এইসব জমিতে এবার রেকর্ড পরিমান আলুর ফলনের আশা করছি। আলুর বাম্পার ফলন ও ভালো দামে বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে যাবে আশা করছি। এছাড়াও কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা আর পরমর্শের কারনে ঘন কুয়াশায় আলুর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মো: হামিদুর রহমান বলেন, এ অঞ্জলের কৃষকেরা কয়েকদফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেও মধ্যে ১০হাজারের বেশী কৃষককে আমরা কৃষি সহায়তা প্রদান করেছি। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে কৃষকরা যাতে রবি শস্য চাষ করে ভাল ফলন পায় এজন্য জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স¦ল্প খরচে ফসল উ’পাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি এবং সার্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এ জেলায় দুই বার শৈত্য প্রবাহ বয়ে গেলেও কৃষি অফিসের ততপরতায় কৃষকদের আগাম প্রস্তুতির কারনে ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড শীতে আলু ক্ষেতের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। সব মিলে এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা।