আগামী ২১শে ফেব্রয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সাপ্তাহিক টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি থাকায় কক্সবাজার ভ্রমণের সব টিকেট অগ্রীম বিক্রি হয়ে গেছে। চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ছাড়াও বিমান ও বাসের কোনও ধরনের টিকেট নেই। সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ জাহাজের টিকেটও শেষ। গতকাল রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এই তথ্য জানা গেছ। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে কক্সবাজারে ১০ লাখ পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিন। এই তিন দিন দেশের প্রায় সব দাফতরিক কর্মকা- বন্ধ থাকবে। তাই ভ্রমণ পিপাষুদের চোখ এখন কক্সবাজার সৈকত আর সেন্টমার্টিনের গাঙচিলের ডানায়। ওই তিন দিন কক্সবাজারে হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একইভাবে কক্সবাজার ভ্রমণের বিমান টিকেট, বাসের টিকেট এবং সেন্টমার্টিন ভ্রমনেও নেই জাহাজের টিকেট। এই সুযোগে সক্রিয় হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। বিশেষ করে কক্সবাজার কলাতলী পর্যটন জোনে অবস্থানরত হোটেলের রুমের ভাড়া (নরমাল) সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। কিছু হোটেলে ভাড়া সাত থেকে আট হাজার পর্যন্তও চাওয়া হচ্ছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটিতে পর্যটকদের থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় ও পর্যটক হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের ৪০০ এর বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট, কটেজ এবং ফ্লাটের এখন ‘ঠাঁই নেই’ অবস্থা। পর্যটকরা সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, ইনানী, হিমছড়িসহ ছয়টি পয়েন্ট ছাড়াও দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্ণা, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওর্য়াল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, দুলাজাহারা সাফারিপার্ক, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতেও পর্যটকরা ভিড় করতে পারেন। একারণে বেশ কয়েক বছরের মতো কক্সবাজার ভ্রমণে আসা
পর্যটকদের সি-বিচ ও রাস্তায়-রাস্তায় রাত যাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গলিগুলোর সংস্কার কাজ থাকায় যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারেও। গ্রীণ লাইন পরিবহণের কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ সোলতান আহমদ জানিয়েছেন, ‘আগামী ১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাসের কোনও ধরনের টিকেট নেই। সব টিকেট অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে।’ কক্সবাজার সি ওয়ার্ল্ড হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ চৌধুরী জানান, ‘আমাদের হোটেলে ২৪৫টি রুম রয়েছে। কিন্তু, একটি রুমও খালি নেই। সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন কলাতলীতে ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহেল জানান, ‘পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকে এত বিপুল পর্যটক আগমন কল্পনা করিনি। আমার আটটি ফ্ল্যাটের মধ্যে কোনও ফ্ল্যাট খালি নেই। অতিরিক্ত টাকা দিলেও কোন কক্ষ ভাড়া দেওয়ার মতো নেই।’
বিলাস বহুল জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের কক্সবাজারের সমন্বয়কারী হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, ‘ভাষা দিবসে তিন দিনের ছুটি থাকায় পর্যটন স্পটগুলোতে ব্যাপক লোক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সাগরপথে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পাঁচ হাজার টিকিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। একইভাবে অন্যান্য জাহাজগুলোরও এই অবস্থা। ফলে অনেকেই সেন্টমার্টিন যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও যেতে পারবেন না।’
কক্সবাজারের অ্যাডভেঞ্জার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলের মালিক রাশেদুল আমিন জানান, ‘বিমানে টিকেট পাওয়া এখন দুষ্কর। ভয়াবহ অবস্থা চলছে। সর্বনিম্ন ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান টিকিটের মূল্য ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কক্সবাজার থেকে ফিরতি টিকেটও একই অবস্থা। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আমাদের একটি পর্যটকদল কক্সবাজার ভ্রমণে আসার টিকেট বুকিং দিলেও ফিরতি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।’
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান জানান, ইতোমধ্যে শহরের আবাসিক হোটেল, কলাতলীর গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসসহ সবখানে রুম বুক হয়ে গেছে। এসব হোটেল মোটেলে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের রাত্রী যাপনের সুযোগ রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পর্যটক আগমন ঘটলে পরিস্থিতি সোচনীয় হতে পারে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘেœ ও সার্বিক নিরাপত্তায় লাবনী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মেইন বিচসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়াও শহরের বাইরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে। ইজিবাইক ও গাড়ি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল ডিউটি রাখা হবে। কক্সবাজারের বাইরে থেকেও অতিরিক্ত একটি টিম আনা হয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। নিরাপত্তায় কোনও ত্রুটি না থাকলেও সড়কে সংস্কার কাজ চলায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।’