ঈমানের সাথে আমলে সালিহ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ও ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমলে সালিহ বলতে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত সব আদেশ-নিষেধ পালন করাকে বোঝায়। তা ছাড়া ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সব কার্যক্রম শরিয়তের বিধান মোতাবেক পরিচালনা করা আমলে সালিহের অন্তর্ভুক্ত। ঈমান আনার পর যে মুমিন আমলে সালিহ করে তার অর্জিত হয় অগণিত কল্যাণ। যেমন-
১. দিদারে ইলাহি তথা আল্লাহর সাক্ষাৎ : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘সে দিন কিছুসংখ্যক মুখম-ল তরতাজা থাকবে। আর নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে’ (সূরা কিয়ামাহ : ২২-২৩)। হাদিস শরিফে রয়েছে- ‘তোমরা প্রকাশ্যে সুস্পষ্টভাবে তোমাদের রবকে দেখতে পাবে’ (বুখারি)। হাদিসে এসেছে ‘আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদের জন্য পর্দা উন্মুক্ত করে দেবেন, অতঃপর তারা আল্লাহ তায়ালাকে দেখবে। আল্লাহ তায়ালাকে দেখার চেয়ে প্রিয় কোনো বস্তু জান্নাতিদের দান করবেন না এবং চক্ষু শীতল হওয়ার মতো অন্য কিছু থাকবে না’ (মুসলিম হাদিস নং-১৮১, কুরতুবি ১৯তম খ-, পৃষ্ঠা-৭৬)। এ সাক্ষাতে জান্নাতিদের বিভিন্ন স্তর থাকবে। কেউ সপ্তাহে একবার তথা জুমাবার, কেউ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা, কেউ সারাক্ষণ সাক্ষাৎ লাভ করবে (মাজহারি)। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাবো, প্রত্যুত্তরে মহানবী সা: বলেন, ‘যখন মেঘের আড়াল থাকে না তখন সূর্য ও চাঁদকে দেখতে তোমাদের কি কোনো কষ্ট হয়? সবাই বললেন- না। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের রবকে এরকমই স্পষ্ট দেখতে পাবে’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। এ মর্যাদা ওই সব মুমিনই লাভ করবে যারা ঈমান আনার সাথে সাথে নেক আমলও করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘অতএব যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে’ (সূরা কাহফ- ১১০)।
২. খিলাফত : যে সব মুমিন নেক আমল করবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পৃথিবীর খিলাফত তথা শাসনক্ষমতা দান করবেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের আগে অতিক্রম লোকদের দান করেছিলেন’ (সূরাআন-নূর-৫৫)।
৩. জান্নাত : যেসব মুমিন নেক কাজ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাত দান করবেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর হে রাসূল! যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আপনি তাদেরকে এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে’ (সূরা আল বাকারা-২৫)। আরো ইরশাদ করেন- ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে (সূরা আল-বাকারা-৮২)।
৪. ক্ষমা : নেক আলমকারী মুমিনরা পরকালে মাগফিরাত লাভ করবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন’ (সূরা আল মায়েদাহ-৯)। আরো ইরশাদ করেন- ‘সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুজি’ (সূরা আল হজ-৫০)।
৫. হিদায়াত : ঈমানদার নেক আমলকারীরাই হিদায়াত তথা দ্বীনের সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘অবশ্যই যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা হিদায়াত দান করবেন, তাদের ঈমানের মাধ্যমে (সূরা ইউনুস-৯)।
৬. ক্ষতি থেকে মুক্তি : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘কালের শপথ! অবশ্যই সব মানুষ ক্ষতিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করে এবং যারা একে অন্যকে হকের ও ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয় (সূরা আল আসর : ১-৩)।
৭. গুনাহের কাফফারা : ঈমান ও নেক আমল হবে গুনাহের কাফফারা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেবো এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেবো’ (সূরা আল আনকাবুত-৭)।
৮. অফুরন্ত পুরস্কার লাভ : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার’ (সূরা হামিম-সিজদা-৮)।
৯. প্রভুর রহমত লাভ : আমলে সালিহ দ্বারা আল্লাহ তায়ালার রহমত লাভ হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য’ (সূরা আল জাসিয়া-৩০)।
১০. আলোর সন্ধ্যান লাভ : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘মুহাম্মদ সা: একজন রাসূল, যিনি তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন, যাতে বিশ্বাসী ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্ধকার থেকে আলোতে আনয়ন করেন’ (সূরা আত তালাক-১১)।
১১. সৃষ্টির সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা’ (সূরা বাইয়িনাহ-৭)।
১২. আল্লাহর ভালোবাসা লাভ : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসা দান করেন’ (সূরা মারইয়াম-৯৬)।
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।