ব্যক্তি ও সভ্যসমাজ বিনির্মাণে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কার্যক্রমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের রয়েছে যথেষ্ট ভূমিকা। কারণ ইসলাম নারী ও পুরুষ প্রত্যেককে যার যার উপযুক্ত সম্মান ও অধিকার দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব, যা তারা করত।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)
এখানে সমাজ ও ব্যক্তি গঠনে মুসলিম নারীর কয়েকটি ভূমিকার দিক তুলে ধরা হলো।
পরিবারকে আগলে রাখে: পরিবারকে আগলে রাখার ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের পরিস্থিতে তারা পরিবারকে আগলে রাখে, পরিবারের মানুষদের অনুপ্রেরণা জোগায়। নিজে না খেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেয়। অসুস্থ শরীর নিয়েই স্বামী-সন্তানের সেবায় নিয়োজিত থাকে। একটা নারী প্রতিদিন স্বামী-সন্তান ও নিজের সতীত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করে যায়। তাদের এই ত্যাগ বিফলে যাওয়ার নয়। মহান আল্লাহ তাদের উত্তম পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন। একবার আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) এক আনসারি নারী সাহাবি নবীজির দরবারে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, পুরুষরা যখন জিহাদে বের হয় আমরা তখন তাদের পরিবার, অর্থ-সম্পদ এবং সন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্বে ব্যস্ত থাকি, তাহলে আমরা কি এর প্রতিদান পাব? তখন নবীজি সামনে বসা সাহাবিদের উদ্দেশ করে বলেন, দেখেছো দ্বিনি বিষয়ে এই নারী কত চমৎকার প্রশ্ন করেছে! তারপর ওই নারীকে নবীজি বলেন, তোমরা স্বামীর অনুপস্থিতিতে তোমাদের সতীত্ব রক্ষা করবে, স্বামীর সন্তুষ্ট অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবে এবং সন্তানদের দেখাশোনা করবে, তাহলে তোমরাও আল্লাহর পক্ষ থেকে এর যথাযথ প্রতিদান পাবে। (শুয়াবুল ঈমান বায়হাকি, হাদিস : ১১/১৭৭)
সন্তানের প্রথম পাঠশালা মায়ের কোল: ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মায়ের ত্যাগ ও ভালোবাসায় একজন সন্তান তার মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটান। তা ছাড়া মায়ের ভালোবাসা, আদর-স্নেহে একজন সন্তান বড় হয়ে ওঠে। আল্লাহকে ডাকতে শেখে। সাধারণত একজন মা-ই সর্বপ্রথম সন্তানকে মহান আল্লাহর বড়ত্ব সম্পর্কে ধারণা দেন। এক কথায় প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। তাই রাসুল (সা.) তার উম্মতদের মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম : ৬৩৯৪)
স্বামীর অনুপ্রেরণা: একজন স্বামীর পরিপূর্ণভাবে দ্বিন পালন করার জন্য একজন পূণ্যবতী স্ত্রী সহায়ক হয়। স্বামীর সুখ-দুঃখে ছায়ার মতো তার পাশে থাকে একজন পূণ্যময়ী নারী। বিপদে তাকে সাহস দেওয়া, সুদিনে আল্লাহর হুকুম পালনে উৎসাহী করা, সৎ কাজে আত্মনিয়োগের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া একজন মুমিন নারীর ভূষণ। আর যদি নারী পুণ্যবতী না হয়, তাহলে সেই স্বামীর জীবনটা নরকে পরিণত হয়। শুধু একটি পরিবারই নয়; বরং একটি সমাজ ধ্বংস করার জন্য একটি নারীই যথেষ্ট। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পার্থিব জগৎটাই হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্তু। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ পুণ্যময়ী নারী।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭)
মহান আল্লাহ প্রতিটি নারীকে প্রকৃত মুমিনা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।