বাংলাদেশে গত বছরের তুলনায় কিউলেক্স মশার সংখ্যা চারগুণ বাড়ার তথ্য সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। মশাবাহিত রোগবালাইয়ে মানুষের ভোগান্তিও বেড়েছে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য নানা ধরনের মশা বিতাড়নের পণ্যের ব্যবহারও বাড়ছে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য।
কিন্তু এত পণ্যের ভিড়ে কিভাবে বুঝবেন, কোন পণ্যটি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর? সেই খবরই দিয়েছে বিবিসি বাংলা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেছেন, ‘যদি দেখা যায় মশা তাড়ানোর জন্য ব্যবহার হওয়া কোনো কয়েল বা স্প্রে বা ক্রিম বা বিশেষ ব্যাট বা মশারি ব্যবহারে ঘরের মশা মরে যায়, সাথে ঘরের অন্যান্য পতঙ্গ যেমন টিকটিকি বা অন্য ছোট পোকা মারা যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি মানব শরীরের জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকর।’
রিপেলেন্টের কাজ হচ্ছে মশা তাড়ানো, কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় অনেক সময় পণ্যের বিজ্ঞাপনে বলা হয় মশা কার্যকরভাবে মেরে ফেলবে। এর মানে হচ্ছে ওই পণ্যে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, আর সেটি মানব শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ওষুধে যেমন মানবদেহের ক্ষতি হয়, তেমনি মশার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রাণীকুলও বিপন্ন হয়।’
কয়েল, স্প্রে বা অন্য যেকোনো ওষুধের উপাদানের মধ্যে ব্যবহৃত কীটনাশকের মধ্যে পার্থক্য থাকে, একেক কোম্পানি কীটনাশকের একেক ধরনের জেনেরিক ব্যবহার করে। ফলে একটির সাথে আরেকটির ফলাফলে পার্থক্য থাকে।
দেখা গেছে, একেক ধরনের মশার জন্য একেক ধরনের ওষুধ রয়েছে, যেমন পূর্ণবয়স্ক মশা তাড়াতে যে ওষুধ লাগবে, লার্ভা নিধনে সেই একই ওষুধ কাজ করবে না। বাংলাদেশে সাধারণত মশার কয়েল ও স্প্রেতে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ডেল্ট্রামেথ্রিন, ইমিপোথ্রিননের মত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তার মাত্রা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। যেমন মশা তাড়ানোর স্প্রে ঘরে ছিটানোর পর সে ঘরে পরবর্তী ২০ মিনিট মানুষকে থাকতে নিষেধ করা হয়।
কারণ ওই স্প্রেতে ছড়ানো কীটনাশকের ড্রপলেটস মাটিতে নেমে আসতে ২০ মিনিট সময় লাগবে, ফলে তখন সেখানে মানুষ থাকলে তিনি সরাসরি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসবেন, যা তার জন্য ক্ষতিকর।
শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেছেন, ‘নিরাপদ থাকার জন্য মশা মারার ব্যবহার বিধিও জানতে হবে এবং মানতে হবে।’
বিশেষজ্ঞ বলেন, মশার কয়েল মশার স্প্রের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ মশার কয়েল সারারাত ধরে জ্বলে এবং কয়েল জ্বালিয়ে মানুষ ঘরেই অবস্থান করে। কয়েলের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের অসুখ হতে পারে। এছাড়া ক্যান্সার এবং কিডনি রোগেরও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেই সাথে মানুষের চোখ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও তৈরি হয়।
মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন মশা তাড়াতে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তবে ঢাকায় মশার সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে এসব কায়দা কতটা খাটবে সে আশঙ্কাও রয়েছে।
অনেক বছর ধরে মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কয়েকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো:
নিমে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে মশা তাড়াতে নিমের তেল ব্যবহার করা হত। ত্বকে নিম তেল লাগিয়ে নিলে মশা ধারে-কাছেও ভিড়বে না বলে প্রচলিত।
বলা হয়ে থাকে মশা কর্পূরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কর্পূর দিয়ে রাখলে মশা পালিয়ে যায়।
লেবু আর লবঙ্গ একসাথে রেখে দিলে ঘরে মশা থাকে না বলে প্রচলিত আছে। এগুলো জানালায় রাখলে মশা ঘরে ঢুকতে পারবে না
ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে রোদে শুকিয়ে সেটা জ্বালালে চা পাতার ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা-মাছি পালিয়ে যাবে। কিন্তু এতে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হবে না।