কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে সিলিকন চিপ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর চিপ সরবরাহে ঘাটতি থাকার অর্থ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গটির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী না থেকে এখন সিলিকন ওয়েফার তৈরিতে স্বাবলম্বী হতে চায় সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (এসএমআইসি)। এ লক্ষ্যে ২৩৫ কোটি ডলারের বড় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে চীনের শীর্ষ চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে তারা পাশে পাচ্ছে শেনঝেনের প্রাদেশিক সরকারকে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে ২০২২ সাল থেকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার সিলিকন ওয়েফার তৈরি করা সম্ভব হবে বলে এসএমআইসি প্রত্যাশা করছে। খবর ব্লুমবার্গ।
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া এসএমআইসির জন্য একটা বড় আঘাত ছিল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এমন একটি বিনিয়োগ কোম্পানিটির জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানিকে টেক্কা দিয়ে প্রযুক্তির বাজারে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার যে মহাপরিকল্পনা চীন সরকার করেছে, তার আওতায় এটি প্রথম বড় কোনো প্রকল্প।
স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিলকৃত এক নথিতে এসএমআইসি জানিয়েছে, নতুন এ প্রকল্পের আওতায় এসএমআইসি শেনঝেন নামে নতুন একটি সাবসিডিয়ারি গঠন করবে তারা। আর এতে তাদের বিনিয়োগ থাকবে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এদিকে শেনঝেনের প্রাদেশিক সরকারের বিনিয়োগও থাকবে সাবসিডিয়ারিটিতে। প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি শেনঝেন মেজর সাবসিডিয়ারিটির সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ মালিকানা কিনে নেবে বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি কাঠামোগত সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে এসএমআইসি জানিয়েছে।
এসএমআইসি ৫৫ শতাংশ, আর প্রাদেশিক সরকার ২৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নিলে বাকি থাকে ২২ শতাংশ শেয়ার। এ মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে এসএমআইসি ও শেনঝেন সরকার যৌথভাবে তৃতীয় পক্ষের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর শেনঝেন কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে এসএমআইসি। তাদের লক্ষ্য হলো ২৮ ন্যানোমিটার বা তার বেশি সাইজের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) ভিত্তিক ১২ ইঞ্চি ওয়েফার তৈরি করা। আর কারখানাটির মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪০ হাজার ইউনিট হবে বলে এসএমআইসি প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে।
সেমিকন্ডাক্টর তৈরির ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো সিলিকন ওয়েফার। কিন্তু সেমিকন্ডাক্টরের সাপ্লাই চেইনের এ খাতে চীনের নিজস্ব উৎপাদন সবচেয়ে কম। বিশেষ করে ১২ ইঞ্চি সিলিকন ওয়েফার তৈরিতে বেশ পিছিয়ে রয়েছে চীন।
গত মাসে এসএমআইসির সহপ্রধান নির্বাহী ঝাও হাইজুন জানান, তাদের বিদ্যমান কারখানাগুলো গত কয়েক প্রান্তিক ধরেই সক্ষমতার পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনে রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে মোট চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনঝেনে নতুন একটি কারখানা স্থাপন করছে তারা।
এক বিবৃতিতে এসএমআইসির পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, ন্যানোপ্রযুক্তি সেবার মানোন্নয়ন ও মুনাফা সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
মহামারীর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে সিলিকন চিপ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এসএমআইসি গতকাল সতর্ক করে বলেছে, এ ঘাটতি চলতি ও আগামী বছরে আরো বাড়তে পারে। এ অবস্থায় চীনের নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা এখনই বাড়ানো না হলে ভবিষ্যতে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদকদের বিপাকে পড়তে হবে।
মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ইন্টেল ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম হবে, এমন একটি সেমিকন্ডাক্টর জায়ান্ট গড়ে তুলতে চাইছে চীন। এ লক্ষ্যে দেশটির সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চিপ নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও গবেষণা জোরদার করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
মোদ্দাকথা হলো, সিলিকন চিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের ওপর থেকে নির্ভরতা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে চীন। এসএমআইসির শেনঝেন প্রকল্পে সরকারি বিনিয়োগ সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে বড় একটি পদক্ষেপ।