গত সোমবার বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত তিনটি ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়স্থল বাসস্থান হারিয়েছে। গত মঙ্গলবার আইওএম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কক্সবাজারের বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইয়োহানেস ফন ডেয়ার ক্লাউভ।
তবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে সরকারের ত্রাণ, পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, আগুনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি আশ্রয়স্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ক্যাম্পে আইওএম-এর সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী সেবাপ্রদানকারী এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গত বছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষকে সেবা দিয়েছিল। এই ক্ষয়ক্ষতির ফলে কোভিড-১৯ চিকিৎসাসেবায় নতুন করে চ্যালেঞ্জের সন্মুখীন হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও অজানা। মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১১ জন মানুষ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছে। পাঁচশর বেশি আহত হয়েছেন এবং আনুমানিক চারশ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
আইওএম-এর মহাপরিচালক এন্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, ‘এই বিপর্যয় একটি ভয়াবহ ধাক্কা যা কক্সবাজারের শরণার্থীদের মানবিক প্রয়োজনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমাদের এই পুনর্বাসনের জন্য আমার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকার, আমাদের দাতাগোষ্ঠী, সহযোগী সংস্থা এবং মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয় ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আইওএম মহাপরিচালক বলেন, ‘তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। আইওএম আহতদের সেবা দিতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনো-সামাজিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সংস্থাটির অ্যাম্বুলেন্স এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল দল মোতায়েন করেছে। ঘটনাস্থলে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা প্রথম সেবাপ্রদানকারী ছিল। লোকজনকে সুরক্ষায় সহায়তা করেছিল, আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করেছিল এবং ত্রাণ কার্যক্রমে কাজ করেছিল। আইওএম-এর বিভিন্ন টিম এবং সহযোগী সংস্থাগুলো অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে আসা মানুষদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে রাতের বেলা কাজ করেছিল।’ আইওএম মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার এই পরিবারগুলো আবার তাদের নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে ফিরতে শুরু করেছে। আইওএম ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি সহায়তা দিয়েছে। জরুরি সহায়তার মধ্যে আশ্রয় সরঞ্জামাদি এবং খাবার পানির পাশাপাশি জরুরি জিনিসপত্র যেমন মাস্ক, সাবান, কম্বল, সোলার লাইট, মশারি এবং জেরিক্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্ষার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়গুলোর পুনর্র্নিমাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আইওএম মানুষকে টেকসই আশ্রয়স্থল, পানি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলির পাশাপাশি গত বছর থেকে চলমান কোভিড-১৯-এর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনর্গঠন করতে সহায়তা করবে। আইওএম-এর জরুরি তহবিল এই ত্রাণ কার্যক্রমে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অতি জরুরি প্রয়োজনের সহায়তা কার্যক্রমে আরও ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।’ সূত্র: এনটিভি