মেঝেতে পরে আছে পানির খালি বোতল, নানাধরনের খাবারের উচ্ছৃষ্ট। পাশেই চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নিরুপায় হয়ে শুয়ে আছেন অসহায় রোগী। চিত্রটা অনেকটা ডাস্টবিনের মতো দেখতে হলেও আশ্চর্য্যজনক বিষয় এটা বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দৃশ্য। সময় বিশেষের জন্য নয়; সার্বক্ষনিক সময়ে এই পরিবেশকে সাথে নিয়ে দিনাতিপাত করছেন এই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। শুধু করোনা ওয়ার্ডের ফ্লোরের এই দৃশ্যই শেষ নয়; বেসিন থেকে শুরু করে টয়লেটসহ সবক্ষেত্রে একই দৃশ্যপট বিদ্যমান রয়েছে। নোংরা পরিবেশের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা নিয়েও রোগী ও স্বজনদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের (রোগী ও স্বজন) সবার একই অভিযোগ, এভাবে নোংরা পরিবেশে করোনা ওয়ার্ডে থাকা যাচ্ছেনা। এমন পরিবেশে সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ্য হয়ে পরে। সূত্রমতে, প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না করোনা ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত রোগীরা। আইসিইউ বেড সংকটের কারণে মুমূর্ষু রোগীরা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। করোনা ওয়ার্ডের ওষুধপত্রও কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। খাবারের মানও যাচ্ছে তাই। সবকিছু মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় চলছে শের-ই বাংলা মেডিক্যালের করোনা ওয়ার্ডে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত একবছরে অভিজ্ঞতা ছাড়া কিছুই বাড়েনি। বরং লজিস্টিক সাপোর্ট আরও কমেছে। এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে স্থায়ী জনবল নিয়োগের কোন বিকল্প নেই। সূত্রমতে, করোনা প্রকোপের শুরুতে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন নির্মিত একটি চতুর্থ তলা ভবনে দেড়শ’ বেডের করোনা ওয়ার্ড চালু করে কর্তৃপক্ষ। করোনা ওয়ার্ডে ১২ বেডের একটি আইসিইউ ইউনিট রয়েছে। একবছর আগে চালু হওয়া করোনা ওয়ার্ড কিংবা করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ ইউনিটের জন্য অদ্যবর্ধি কোন স্থায়ী জনবল নিয়োগ হয়নি। এমনকি একবছর আগের অনেক যন্ত্রপাতি কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। এ কারনে করোনা ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। সূত্রে আরও জানা গেছে, হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে ধার করা নয়জন চিকিৎসক এবং ১৫জন নার্স তিন শিফটে কোনমতে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছন। করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ ইউনিটেও অন্য ওয়ার্ড থেকে ধার করা মাত্র তিনজন চিকিৎসক এবং তিনজন নার্স মুমূর্ষ রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। পুরো করোনা ওয়ার্ড এবং আইসিইউ ইউনিটে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কিংবা রোগীর ফুটফরমায়েশ করার জন্য তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন চতুর্থ শ্রেণির মাত্র তিনজন কর্মচারী। ফলে দুর্গন্ধময় করোনা ওয়ার্ডসহ ফ্লোর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করছেন রোগীর স্বজনরা। এ ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘন্টায় শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে একজন ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় আটজনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ২৪ ঘন্টায় করোনা সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২৫ জন ভর্তি হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে ২৬ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯৩ জন। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগের ব্যাপারে ডাঃ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ এবং লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।