কাশ্মিরের চলমান সংকটের সমাধানে পাকিস্তান ও ভারতের উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এই বছরের জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার এই খবর জানায় লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যেই কাশ্মির অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা চলে আসছে। ২০১৯ সালে ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলার পর দুই দেশের উত্তেজনা নতুন মাত্রা নেয়। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করে দেশটিতে বিমান হামলা চালায়।
পরে ওই বছরের শেষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে এর আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের সাংবিধানিক ধারা বাতিল করে অঞ্চলটিকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন। ভারতের এই পদক্ষেপে পাকিস্তান ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং দেশটি ভারতের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক অবনয়নের সাথে সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থপিত করে। তবে দুই দেশের সরকার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বর্তমানে উভয়পক্ষের অনুকূল রোডম্যাপের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে কূটনীতিক আলোচনা শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। দীর্ঘ ৭০ বছরের বেশি সময় কাশ্মির নিয়ে উভয়দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। কাশ্মির ভূখণ্ড উভয়দেশের খণ্ডিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও দুই দেশই পুরো অঞ্চলটির অধিকার দাবি করে আসছে।
বর্হিবিশ্বে নিজ নিজ স্বার্থ নজরদারী করা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ও পাকিস্তানি ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের ব্যবস্থাপনায় দুবাইয়ে এই বৈঠকে বসে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্স যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাতে সাড়া দেয়া হয়নি। অপরদিকে আইএসআই নিয়ন্ত্রণকারী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, তিনি বিশ্বাস করেন পাকিস্তান ও ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরে তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠক করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় থাইল্যান্ড, দুবাই, লন্ডনে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।’ অতীতে বিভিন্ন সময় দুই দেশের মধ্যে সংকটের সময় অপ্রকাশ্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিল্লির একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের ফলাফল নিয়ে সংশয় থাকায় এবং যে কোনো সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কায় কেউই ওই বৈঠকের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। এমনকি এই বৈঠকের কোনো শিরোনামও নির্ধারণ করা হয়নি। জানুয়ারির এই বৈঠকের পর পাকিস্তান ও ভারত উভয়পক্ষ কাশ্মির ভূখণ্ডে উভয়দেশের সীমানা নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) গোলাগুলি বন্ধের ঘোষণা দেয়।
উভয়পক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দেয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মির নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। উভয়দেশই পুরো ভূখণ্ডটি নিজেদের দাবি করছে। ভূখ-টির অধিকার নিয়ে দুই বার যুদ্ধে জড়িয়েছে উভয়দেশ।সূত্র : রয়টার্স