পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ার হিরশাবিল অঙ্গরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী সাকারিয়া সোলাইমান। হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের জেনেটিক্স এ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগ থেকে ২০১৮-১৯ সেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি।
এরপর হাবিপ্রবি থেকে স্নাতকোত্তর শেষে করে তিনি সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে হিরশাবিল অঙ্গরাজ্যের এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এমপি নির্বাচনে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা এবং জনসম্পর্কের উপর তার ভালো ধারণা থাকার ফলে শতকরা ৯৫ শতাংশ ভোটে এমপি নির্বাচিত হন সাকারিয়া।
সাকারিয়ার জন্ম সোমালিয়ার রাজধানী মোগাডিশুতে। ছোট বয়সেই বাবা হারা হন সাকারিয়া। বাবা মারা যাওয়ায় ছোটবেলাতেই তাঁকে জীবন যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়। অভাবের সংসারে এক রকম টানাপোড়েনের মধ্যে কৃতিত্বের সাথে স্কুল ও কলেজের গন্ডি পেরিয়ে সাকারিয়া ভর্তি হন সোমালিয়ার বেনাদির কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার জন্য বৃত্তি নিয়ে সাকারিয়া ভর্তি হন বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ হাবিপ্রবিতে। এরপর হাবিপ্রবির জেনেটিক্স এ্যান্ড প্লান্ট ব্রীডিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেই দেশে ফিরেন তিনি। ছোট বয়সেই বড় নেতা হবার সুপ্ত বাসনা ছিলো সাকারিয়ার মাঝে। সেই বাসনা থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নেন সাকারিয়া। এরপর ২০২০-২১ সালের এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে সোমালিয়ার হিরশাবিল অঙ্গরাজ্যের এমপি নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য অবিশ্বাস্য এবং বিস্ময়কর ছিলো। আমি জীবনের সকল যু্দ্েধই বিজয়ী হবার স্বপ্ন দেখেছি এবং অবশেষে আমি সেটাই হয়েছি। আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই, ধন্যবাদ পাবার আশা ছাড়াই ভালো কাজ করো, তাহলেই তুমি মহান এবং সফল হবে।’
এসময় সাকারিয়া তার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাবিপ্রবি নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘হাবিপ্রবি সব সময় আমার মনের মাঝে রয়েছে। আমি সব সময় আমার প্রিয় শিক্ষক, আমার সুপারভাইজার এবং সহপাঠী বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করি। তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। হাবিপ্রবির জিয়া হলে আমার বেশ ভালো সময় কেটেছে। ইনশাআল্লাহ আশা করছি, খুব দ্রুতই সকলের সাথে আবার দেখা হবে। ততদিন সকলে সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুন এমনটাই প্রত্যাশ্যা করি।’
এদিকে সাকারিয়ার এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার শুভাকাক্সক্ষীরাও। হাবিপ্রবির ১৭ ব্যাচের ফুড এ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোয়ায়েব হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেরাও জানি না যে আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা সত্যিই অসাধারণ। আমরা তখনই তাদের বুঝতে পারি যখন তারা তাদের যোগ্যতার আসনে আসীন হন। যেমন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। ঠিক তেমনি বড় ভাই সাকারিয়াও। তিনি খুব মজার ও হাস্যোজ্বল একজন মানুষ। এই কৌতুক প্রিয় মানুষটি খুব ভাল ফুটবল খেলতেও জানতো। এছাড়া সাকারিয়া ভাইয়ের মাঝে অনেক নেতৃত্বসুলভ গুণও ছিলো। এজন্য আমি মনে করি সাকারিয়া শুধু সোমালিয়ানদের গর্ব নয়, বরং হাবিপ্রবিরও গর্ব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, সাকারিয়ার এমন সাফল্যে আমরা গর্বিত। সে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।
উল্লেখ্য, হাবিপ্রবিতে সোমালিয়া, ভারত, নেপাল, ভুটান, নাইজেরিয়াসহ মোট ছয়টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে হাবিপ্রবিতে মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৮ জন। ইউজিসির সর্বশেষ (৪৬তম) বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নের দিক থেকে হাবিপ্রবির অবস্থান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।