রাজশাহীতে জেলা পুলিশের অভিযানে পৌর মেয়রের বাড়ী থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, মাদক এবং প্রায় এক কোটি টাকা সেই সাথে পৌর মেয়রের স্ত্রী সহ তিনজন আটক হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহীর আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয় বাংলা মোড়ে বাঁশবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজ, বাগাতিপাড়া, নাটোরের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ী সংলগ্ন ঔষধের দোকানে গিয়ে হইচই শুরু করে। তাদের হট্টগোলে মনোয়ার হোসেন মজনু ভয়ে বাড়ীর ভিতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা তার পেছনে পেছনে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারপিট শুরু করে। মজনুকে মারপিট করতে দেখে তার কলেজ পড়–য়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে উদ্ধার করতে গেলে মেয়রের লোকজন তাদেরকেও মারপিট করে আহত করে। উল্লেখ্য, গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে পৌর মেয়র মুক্তার আলী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২য় বারের মত পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনের সময় মনোয়ার হোসেন মজনু পৌর মেয়রের পক্ষ না নিয়ে নৌকা প্রতীক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা চালান। মুলতঃ সেই শত্রুতার জের ধরেই মনোয়ার হোসেন মজনু নির্যাতনের স্বীকার হন বলে মজনু দাবী করছেন।। ঘটনার রাতেই মনোয়ার হোসেন মজনু মেয়র মুক্তার আলীকে আসামী করে অজ্ঞাত আরো তিন চার জনের নামে বাঘা থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৭, তারিখ-০৭/০৭/২০২১। মামলা দায়েরর পর রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মোঃ আশরাফুল আলম এবং সুহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহম্মেদ এর নেতৃত্বে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলামসহ একটি চৌকস দল পৌর মেয়র মুক্তার আলী ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালান। অভিযানের একপর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়ীতে তল্লাসী চালানো হলে মেয়রের বাড়ী থেকে অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদক, নগদ টাকা ও মেয়রের স্বাক্ষরযুক্ত চেক উদ্ধার হয়। জব্দকৃতর মধ্যে পুলিশ দেখিয়েছে- একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশী পিস্তুল, ৭.৬৫ পিস্তুলের ০৪টি ম্যাগাজিন, ৭.৬৫ পিস্তলের ৭ রাউন্ড তাজাগুলি, ৭.৬৫ পিস্তুলের ০৪ টি গুলির খোসা, ১টি ওয়ান শুটারগান, ১টি দেশী তৈরী বন্দুক, ১টি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, ১৮ লক্ষ টাকার স্বাক্ষরযুক্ত চেক এবং নগদ চুরানব্বই লক্ষ আটানব্বই হাজার টাকা এবং সেই সাথে মেয়রের স্ত্রী ও দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে গতকাল বুধবার ১২টা ৩০ মিনিটে রাজশাহী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম(বার) সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মোঃ আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোঃ ইফতেখায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী সার্কেল) মোঃ আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহম্মেদ এবং বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম।