আমানতের সর্বনি¤œ সুদহার পরিবর্তনের জন্য ব্যাংকের এমডিদের সুপারিশ নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার ১১ আগস্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা আমানতের সুদ কামানোর জন্য অনুরোধ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমানতের সুদ বহাল রাখার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।’
এর আগে রবিবার (৮ আগস্ট) আমানতের সর্বনি¤œ সুদহার নির্ধারণ করে একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলার অবিলম্বে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো গড়ে চার শতাংশের কিছু বেশি হারে সুদ বা মুনাফা দিয়ে থাকে। সুদের হার অতিমাত্রায় কমে গেলে ভবিষ্যতে ব্যাংকে আমানতের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতের সুদ বা মুনাফা নির্ধারণে আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি হারকে বিবেচনায় নিতেও বলা হয় ওই সার্কুলারে।
গত জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে। যা জুন মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সেই হিসাবে আমানতের ওপর সুদ প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ দিতে হবে। করোনা মহামারির কারণে সাড়ে ৬ মাস পর ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এমডিরা এতে যোগ দেন। সভায় ঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি, মেয়াদি আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেওয়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার বা পরিমার্জন কিংবা ঋণ ও আমানতে উভয় ক্ষেত্রে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় অংশ নেওয়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমানতের সুদ হার কমানোর জন্য কয়েকটি ব্যাংকের এমডি অনুরোধ করলে বৈঠকে সুদহার না কামানোর যুক্তি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এছাড়া মোবাইল-ল্যাপটপ কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ খাতটিকে অনুৎপাদনশীল খাত হিসেবে এ যাবৎ দেখলেও এখন থেকে উৎপাদনশীল খাত হিসেবে দেখতে বলেছেন গভর্নর। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শতভাগ বাস্তবায়ন করায় ১৫টি ব্যাংককে প্রশংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্ব-কর্মসংস্থান উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দুটি ‘স্টার্টআপ’ তহবিল গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মাত্র ৪ শতাংশ সুদ বা মুনাফায় জামানতবিহীন ‘স্টার্টআপ’ অর্থায়নের উদ্দেশ্যে দুটি ‘স্টার্ট-আপ’ ফান্ড গঠন করা হবে।
সভায় করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় দ্বিতীয় বছরে বড় শিল্পে ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকের এমডিরা জানিয়েছেন, সিএমএসএমই খাতে প্রথম বছর ১৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ১৬টি ব্যাংক ও ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে। অবশ্য ৪০ শতাংশের কম বিতরণ করা ব্যাংকগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।