হজরত ঈসা আ. এর মাধ্যমে আগের জাতির কাছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের-এর আগমনের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সে কথা এভাবে উল্লেখ করেছেন- ‘আর স্মরণ কর! যখন মরিয়ম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) বললো- হে বনি ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে থাকা তাওরাতের সত্যায়নকারী, তোমাদের প্রতি প্রেরিত আল্লাহর একজন রাসুল এবং এমন একজন রাসুলের সুসংবাদ দাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন; তাঁর নাম- ‘আহমদ’।’ (সুরা সফ : আয়াত ৬) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত যে, হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর পর আগমনকারী শেষ নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। এ কারণেই নবি আরাবি বলতেন-
আমি বাবা ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম )-এর দোয়া এবং ঈসা (আলাইহিস সালামের)-এর সুসংবাদের বাস্তব রূপ।’ (মুসনাদে আহমাদ) ‘আহমাদ’ নামের অর্থ : ‘আহমাদ’ শব্দটি যদি আরবি ব্যকরণের হিসেবে ‘ইসমে ফায়েল’ (কর্তৃপদ) থেকে মুবালাগার সীগা (যার দ্বারা কোন কিছুর আধিক্য বর্ণনা করা হয় তা) হয়, তবে এর অর্থ হবে- ‘অন্যান্য সব মানুষের চেয়ে আল্লাহর অধিক প্রশংসাকারী।’
আর যদি এটা ‘ইসম মাফউল’ (কর্মপদ) থেকে হয়, তবে অর্থ হবে- (প্রশংসিত) সুন্দর গুণাবলী এবং বহুমুখী পরিপূর্ণতার অধিকারী হওয়ার কারণে যত প্রশংসা তাঁর করা হয়েছে, এত প্রশংসা অন্য কারো করা হয়নি।’ (ফাতহুল কাদির)
তাফসিরে জাকারিয়ায় এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে- হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক সুসংবাদ দেওয়া সেই রাসুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- ‘আহমাদ’। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুহাম্মাদ, আহমদ এবং আরও কয়েকটি নাম ছিল। হাদিসে পাকে তিনি ঘোষণা করেন-
‘আমার কয়েকটি নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি ‘মাহি’ বা নিশ্চিহ্নকারী; যার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ কুফরি নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। আর আমি ‘হাশির’ বা একত্রিতকারী; আমার কদমের কাছে সব মানুষ জমা হবে। আর আমি ‘আকিব’ বা পরিসমাপ্তিকারী।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান) তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম এ কয়টিতেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্য হাদিসে আরও এসেছে-
হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আমাদেরকে তার নাম উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে কিছু আমরা মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন- ‘আমি ‘মুহাম্মাদ’, ‘আহমাদ, হাশির, মুকাফফি (সর্বশেষে আগমনকারী), নাবিইউত তাওবাহ (তাওবাহর নবি), নাবিইউল মালহামাহ (সংগ্রামের নবি)।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদ প্রদানের কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসেও এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিরা তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদেরকে আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন। জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আমি আমার পিতা (পিতৃপুরুষ) ইবরাহিম এর দোয়া; ঈসা এর সুসংবাদ এবং আমার মা যখন আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন তখন তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হয়ে সিরিয়ার বুসরা নগরীর প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে গেছে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, মুসনাদে আহমাদ) অন্য বর্ণনায় এসেছে, এমনকি এ সুসংবাদের কথা হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসিও স্বীকার করেছিলেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উল্লেখ্য হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন একজন সম্মানিত নবি ও রাসুল। তিনি ছিলেন দুনিয়ার মানুষের জন্য আল্লাহর একত্ববাদের এক মহা নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বাবা ছাড়া তাঁর মায়ের গর্ভে রূহ ফুৎকার করে দিয়েছিলেন। তিনি শিশু অবস্থায় মহান আল্লাহর এ সত্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। আবার তিনিই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য: এ সঠিক বিশ্বাস থেকে তাঁর অনুসারী খ্রিস্টানরা দূরে সরে গিয়েছে। তাঁরা তাঁকে আল্লাহর সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করে। কোরআনের ভাষায় এটি এত ভয়ানক কথা যে, এ কথা শুনে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়বে, পৃথিবী বিদীর্ণ হবে এবং পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
তারা বলে দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। নিশ্চয়ই তোমরা তো এক অদ্ভুত কা- করেছ। হয় তো এর কারণেই এখনই নভোম-ল ফেটে পড়বে, পৃথিবী খ–বিখ- হবে এবং পর্বতমালা চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাবে।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৮৮-৯০) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সত্য প্রকাশে কোরআনের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।