শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

নতুন সংকটে সেন্টমার্টিন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২২

শীত মৌসুমে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ। ছুটির দিনে ৫-৬ হাজার পর্যটক এবং সাধারণ দিনগুলোতে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক এই দ্বীপ ভ্রমণ করেন। পর্যটকদের চাপে এই দ্বীপের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্রের পানি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দূষণের ঘটনা। শুধু সৈকতের কাছেই নয়, দ্বীপের এক কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকার পানিতেও ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকার কথা। কিন্তু পরীক্ষা করে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনের পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কয়েকগুণ বেশি। যাকে সহজ ভাষায় ভয়াবহ মাত্রা বলা হয়। ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া মানুষের মলমূত্র থেকে জন্ম নেয়। আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের ম্যামব্রেইন ফিলটেশন ম্যাথড অনুসরণ করে এই গবেষণা করেছেন তারা। এতে সেন্টমার্টিনের চারপাশের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকা এবং সৈকত থেকে ১ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র এলাকার পানি সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়। পানিতে ফিকাল কলিফরমের উপস্থিতি পাওয়া গেলে সেই পানি ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত বলে ধরা হয়।
ইশেরশিয়া কোলাই বা ই-কোলাই হলো অণুজীব জগতের অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। ই-কোলাই আক্রান্ত হলে পেট ব্যথা , পাতলা পায়খানা, গ্যাস, ক্ষুধামন্দা, বমি ভাব, জ্বরÍএই ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। রোগ আরও খারাপ পর্যায়ে গেলে প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। তার থেকে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক এটির বিরুদ্ধে কাজ করে না।
গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের সৈকতের পানিতে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১ থেকে ২৭২ সিএফইউ ফিকাল কলিফরম অর্থাৎ ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ১০০ মিলিলিটার পানিতে যদি ২০০’র ওপরে টোটাল কলিফরম পাওয়া যায় সেটাকে দূষিত হিসেবে ধরা হয়। ফিকাল কলিফরম যেটাকে ‘ই-কোলাই’ বলা হয় সেটি প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে ১০০ থেকে ২০০’র ওপরে পাওয়া যায় তাহলে তাকে দূষিত ধরা হয়। গবেষকরা পরীক্ষা করে– সৈকতের পানিতে এবং সৈকত থেকে ১ কিলোমিটার দূরের পানিতেও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পান। পর্যটক মৌসুমের সঙ্গে সাধারণ সময়ের তফাৎ দেখা গেছে পর্যটন মৌসুমে ৬৩ শতাংশ এবং সাধারণ সময়ে ৩৭ শতাংশ।
গবেষক দলের প্রধান বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মীর কাশেম বলেন, আমরা পর্যটন মৌসুমে সৈকতের পানিতে টোটাল কলিফরম পেয়েছি ১৫-৬৫৭ সিএফইউ প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে। যেখানে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ১-২৭২ সিএফইউ প্রতি ১০০ মিলি পানিতে। অন্যদিকে সমুদ্রের পানিতে আমরা টোটাল কলিফরম পেয়েছি ২৬-১৮১০ সিএফইউ প্রতি ১০০ মিলিলিটার পানিতে। যেখানে ই-কোলাই পাওয়া গেছে ৩২-২৮০ সিএফইউ প্রতি ১০০ মিলি পানিতে।
গবেষকরা জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতের কাছে যেখানে পর্যটকরা বেশি অবস্থান করেন এবং জেটি সংলগ্ন এলাকায় ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। আবার পশ্চিম সৈকতের থেকে ১ কি.মি দূরে সবচেয়ে বেশি ই-কোলাই পাওয়া গেছে। টোটাল কলিফরম বেশি পাওয়া গেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভেতরে দারুচিনি লেক সংলগ্ন এলাকায়। পর্যটকদের কারণে সৃষ্ট মলমূত্র ব্যবস্থাপনা দ্বীপে নেই। যা যাচ্ছে সবই সাগরে পড়ছে। যার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানান গবেষকরা।
মীর কাশেম বলেন, আমাদের গ্রাউন্ড ওয়াটার নিয়ে কোনও কাজ ছিল না। আমরা বিচ ওয়াটার পরীক্ষা করেছি। গ্রাউন্ড ওয়াটার নিয়েও আমাদের গবেষণা চলমান আছে। বিচে যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে সেটার পাশে যদি নলকূপ থাকে তাহলে সেই পানিও দূষিত হতে পারে। আমরা পরীক্ষা করে দেখবো খাবার পানির মান কেমন আছে। পর্যটক মৌসুমে যে পরিমাণ মানুষ যাচ্ছে তাতেই দ্রুত প্রভাব ফেলছে। মানুষের মলের মধ্যেই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে। জেটি ঘাটের জায়গায় ই-কোলাইর পরিমাণ বেশি থাকার একটা কারণ হতে পারে যে পর্যটকদের নিয়ে জাহাজগুলো এখানে ভিড়ছে। এই জাহাজ থেকে পয়ঃনিষ্কাশনের যে আবর্জনা সেটা পানিতে ফেলা হয়। আবার পর্যটক মৌসুম ছাড়াও আমরা বেশি পেয়েছি। কারণ, তখন নৌকাগুলো থাকে। সেখান থেকে দূষণ হচ্ছে। গবেষকরা পরামর্শ হিসেবে জানিয়েছে, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা ও আর পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করার বিকল্প এখানে নেই।
মালয়েশিয়ান পরিবেশ অধিদফতরের মানমাত্রা অনুযায়ী, বিনোদনমূলক সৈকতের ১০০ মিলিলিটার পানিতে ১ থেকে ১০ কলনি ফরমিং ইউনিট (সিএফইউ) ফিকাল কলিফরমের উপস্থিতি পাওয়া গেলে সেই পানি ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত ধরা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের মানমাত্রায় ১০০ মিলিলিটার পানিতে ২০০ কলনি ফরমিং ইউনিট (সিএফইউ) টোটাল কলিফরম পাওয়া গেলে সেই পানিকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত ধরা হয়। মালয়েশিয়ান পরিবেশ অধিদফতর একই পরিমাণ পানিতে ১০ থেকে ১০০ সিএফইউ হলে দূষিত বলে চিহ্নিত করে। সমুদ্র সৈকতের পানির ক্ষেত্রে ১০০-এর ওপরে হলে দূষিত বলে চিহ্নিত করেন তারা।
২০১৯ সালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করেছেন। ২০২০ সালের জুন মাসে সেই গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। ফাইন্ডিংস ফ্রম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা বাংলাদেশের ৯টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাণসংহারি জীবাণুর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ক্ষমতা নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়।
গবেষকরা উল্লেখ করেন, ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ‘ইমিপেনেম’ অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া। এই জীবাণু সাধারণত তিনভাবে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিতে কাজ করে- মূত্রনালির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটিয়ে, কাটা বা ক্ষতস্থানে সংক্রমণ ঘটিয়ে এবং আইসিইউতে রোগীর শরীরে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটিয়ে। এছাড়া ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটেরিয়া ‘অ্যামিকাসিন’ অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ, ‘নাইট্রোফুরানটন’-এর ক্ষেত্রে ৭৭ শতাংশ, ‘জেনটামাইসিন’-এর ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এবং এরকম তথ্য জানেন কিনা জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, তাদের রিপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয় আমরা প্রস্তাবনা আকারে পাঠিয়েছি। সামনে ডিসি সম্মেলন আছে, যাতে সেখানে এটা উত্থাপন করা যায়। যেহেতু এটা একটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে বড়সড় একটা কাজ করতে হবে। এখন এটা যেহেতু পৌরসভা না, ওই ধরনের কাজ করার মতো অর্থ স্থানীয়ভাবে এখানে নেই। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে এটি সম্মেলনে তুলে ধরার জন্য। হয়তো এখান থেকে আমরা একটি ফিডব্যাক পাবো। তিনি আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ হাতে নিয়েছি। হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির যারা আছে তাদের যুক্ত করে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে লোক নিয়োগ, ময়লা ডাম্পিং স্টেশন তৈরি, সেখান থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য মূল ভূমিতে আনার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা করেছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com