নেদারল্যান্ড টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে প্রধান দেশ। টিউলিপকে নিয়েই নেদারল্যান্ডে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটিতে প্রতি বছর পালন করা হয় টিউলিপ উৎসব। আর আমাদের ষড়ঋতুর এই দেশে এতোদিন দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুল ছিল মানুষের হৃদয়ে। ভারতের কাশ্মীর, নেদারল্যান্ডসহ শীত প্রধান দেশে আমাদের দেশের অনেকেই ভ্রমণে গিয়ে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলটি দেখতে পেতেন।
টিউলিপ চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ছিল কিনা, কিংবা ফুলটির চাষ আমাদের দেশে ফলানো সম্ভব কিনা বিষয়টি ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলচাষী মো. দেলোয়ার হোসেন তার ফুলবাগানে বানিজ্যিকভাবে চাষ ও উৎপাদন করে আজ সেই স্বপ্নকে অনেকটাই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
ফুলচাষী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ২০২০সালে তিনি সীমিত পরিসরে তার বাগানে চাষ করে কয়েকটি রঙের টিউলিপ ফুল পেয়েছিলেন। এবার তা থেকে চারা করে টিউবার ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখন টিউলিপ ঘিরে মানুষের মাঝে তৈরী হচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্ন। এ টিউলিপ আমাদের দেশে কৃষি অর্থনীতির চাকা শক্তিশালী হওয়ার পথও খুলে দিচ্ছে।
দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফুল ফুটায় তা নিয়ে রীতিমত দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার শ্রীপুরের বাড়িতে ভিড় করে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারের বাগানে দ্বিতীয় বারের মতো টিউলিপ ফুল ফুটে। এই টিউলিপ নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দেলোয়ার জানান, টিউলিপ ফুলকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে এবার দেলোয়ার হোসেনের উদ্যোগে দেশের সবচেয়ে শীতপ্রধান এলাকা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেখানকার বেশ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক টিউলিপের চাষ করেছেন। সেখানেও ফুটেছে এবার বাহারী রঙের টিউলিপ। কৃষকদের প্রশিক্ষন, পরিচর্যা, ও দিকনির্দেশনা ফুলচাষী দেলোয়ার হোসেনই করছেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুইবার টিউলিপ ফুটায় সাধারণ মানুষের কাছ তা ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ড থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ ১০ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা টিউলিপ বাল্ব দিয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে এক হাজার ও যশোরের গদখালিতে পাঁচ হাজার বাল্ব বাগান তৈরী করে দেশের টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাবতা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়াও অনেক ছোট উদ্যোক্তা টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তিনি নিজেও তার শ্রীপুরের মাঠে চাষ করেছেন টিউলিপ। ইতিমধ্যে এসব স্থানে টিউলিপ ফুল ফোটায় এ নিয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর বিদেশী টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে এসেছে একের পর এক সফলতা। এখন হলো স¤প্রসারণের কাজ করে যাওয়া। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা(ফুল গবেষক) ফারজানা নাসরিন খান বলেন, আমাদের দেশে টিউলিপ ঘিরে এখন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। আগে শীতের সময়ে বাসা বাড়ির টবে অনেকেই টিউলিপের চাষ করলেও এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে এটা সত্যিই আনন্দের খবর। আমাদের দেশে টিউলিপের একটি বাজার রয়েছে, দেশের বাহিরেও বাজার রয়েছে। কৃষি অর্থনীতিতে দারুন একটি আশা তৈরি হয়েছে। চাষ স¤প্রসারণে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সরকারকেও সহায়তার হাত বাড়াতে হবে।-বাংলাদেশ জার্নাল