শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

পোশাক খাতের এলসিতে বিশেষ ক্লজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের পোশাক রফতানি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী একটি ঋণপত্র পান। সুবিধাভোগী সব পক্ষের উদ্দেশে ঋণপত্রটির একটি ধারায় যা উল্লেখ করা হয়েছে তা এমন জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোর দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ডকুমেন্টারি ক্রেডিট সম্পর্কিত লেনদেনে অক্ষম হতে পারি। নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন ঘটলে আমরা কোনো দায়বদ্ধতা গ্রহণ করব না এবং উদ্ভূত কোনো ক্ষতি, বিলম্বের জন্য দায়ী থাকব না।
পোশাক খাতের ঋণপত্রে (এলসি) যুক্ত হতে শুরু করেছে বিশেষ ক্লজ বা ধারা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক ক্রেতার কাছ থেকে সম্প্রতি এমন ধারা যুক্ত হওয়া ঋণপত্র পেয়েছেন বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে এতে বিশেষ ধারা যুক্ত করেছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানটি। ঋণপত্রে বিশেষ ধারা সংযোজনের কারণে আমদানি-রফতানির বিপরীতে অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা করছেন পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এতে বড় ধরনের বাধা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশের পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের মতে, এমন ধারার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। তবে ঋণপত্র গ্রহণ করা বা না করার বিষয়টি নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট পোশাক রফতানিকারক কারখানা কর্তৃপক্ষের ওপর। নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ধরনের কোনো ঘটনা যদি ঘটে সেক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।
এদিকে ঋণপত্রে নিষেধাজ্ঞা-সংশ্লিষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্রেতার পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি ঋণপত্র আমি পেয়েছি। বিষয়টিকে কীভাবে অ্যাড্রেস করব তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ এ ধরনের ধারা এখন আসবে, আর কীভাবে তা হ্যান্ডেল করা যায় তা বড় উদ্বেগের বিষয়। এটা নিয়মিত চর্চায় পরিণত হওয়ার শঙ্কাও বোধ করছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রেতার পাঠানো ঋণপত্রে বিশেষ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধারায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশ, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনে ব্যবহূত ঋণপত্র কার্যকর থাকবে না। কোনো লেনদেনে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ওই ঋণপত্রের বিপরীতে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কারো সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলে পরবর্তী সময়ে সবাইকে কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের এক প্রতিষ্ঠান ও সাত ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কার কথা সেই সময় জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এখন সে আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ব্যবহার হওয়া ঋণপত্রে যুক্ত হতে শুরু করেছে বিশেষ ধারা।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক এলসির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডোমেইনে পর্যালোচনা করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এখন বৈশ্বিকভাবেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য না, বিশ্বে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট শতভাগ দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ফলে বিশ্বের সব ব্যাংকই তাদের ইস্যু করা ঋণপত্রে এ ধারা অন্তর্ভুক্ত করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে বাধ্যবাধকতা কার্যকর করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক ও পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বণিক বার্তাকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহূত ঋণপত্রে স্যাংশন ক্লজের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ধারাটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যে দেশে অবস্থিত সেই দেশের আইনের বাইরেও প্রয়োগযোগ্য। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বা আইসিসির পরামর্শও আছে ঋণপত্রে স্যাংশন ক্লজ অন্তর্ভুক্ত না করার। বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে যদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়ও সেই ক্ষেত্রে সঙ্গে সহায়ক অন্য ধারা উপস্থাপন করার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।
রফতানিকারক ও ক্রেতা পক্ষ উভয়ের জন্য ঋণপত্রে এমন ধারা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বিশ্বে প্রবহমান ডলার নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন ট্রেজারি। এক্ষেত্রে ঋণপত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেনে সম্পৃক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠান কী চাইল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতা গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্যাংক অনুসরণ করবে আন্তর্জাতিক নিয়ম বা ধারা। ঋণপত্র নিয়ে সমঝোতায় যেতে হবে মার্কিন কোনো ব্যাংকের সঙ্গেই। আর বিশ্বে ব্যাংকিংয়ের ৯০ শতাংশের বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে। ফলে মার্কিন ট্রেজারির মাধ্যমে আসতেই হবে।
তবে বিশেষ ধারা যুক্ত হওয়ায় পোশাক খাতের ব্যবসায় কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণত ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞায় সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি থাকেন না। ক্রেতার পক্ষ ক্লজে বা ধারায় অনেক কিছুই থাকতে পারে, যা আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ক্রেতাকে হয়তো অনুসরণ করতে হয়। কোনো কারখানা এ ধারা যুক্ত থাকায় এলসি নেবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এলসির ধারাগুলো নিয়ে এখন আরো অনেক সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান যেন অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে এলসি নেয়। এ ধরনের ধারা থাকলে তারা ক্রেতাকে অবশ্যই তা না রাখার জন্য বলবে। এক্ষেত্রে আমরা কোনো কিছু চাপিয়ে দেব না, আর সেটা ঠিক হবে না।
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত দেশের পোশাক রফতানি খাত সম্প্রসারিত হয়েছে মূলত ক্রেতা দেশ ও অঞ্চলগুলোর বাণিজ্য সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে। যদিও মার্কিন বাজারের অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) এক্ষেত্রে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। দেশটিতে পোশাক রফতানির বাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবক ছিল অনুন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য দেয়া কোটা সুবিধা। জিএসপি সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাজার বড় হয়েছে প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)। এরপর অন্যান্য ক্রেতাদেশও জিএসপি দিয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য ক্রেতাদেশগুলো থেকে বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। তবে বর্তমান নিষেধাজ্ঞার কারণে সামনের দিনগুলোয় ইইউসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে এ ধরনের সুবিধা আদায় কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশের মোট রফতানির ৬৩ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে এতদিন অনেক ধরনের রেয়াত পেয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে মূলত একপক্ষীয় সুবিধাই পাওয়া গিয়েছে বেশি। কিন্তু যখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে, তখন দুই ডজনের বেশি কনভেনশন সই করতে হবে ও মানতে হবে। তখন বাংলাদেশ আর কোনো ছাড় পাবে না। সামনের দিনগুলোয় ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোটটির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপটি নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সভাগুলোয়ও বেশ আলোচনা হচ্ছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, জিএসপি নিয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া প্রায় সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দিন শেষে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আরো অনেক কিছু করার আছে বলে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। নীতি সুবিধার প্রসঙ্গ এলেই মার্কিনরা শ্রম অধিকারের পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলো টেনে নিয়ে আসছে। এতে এসব বিষয়ও এখন বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে দরকষাকষির অংশ হয়ে উঠেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com