প্রায় দুই যুগ আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিক শিল্পনগরী। বর্তমানে এ নগরীতে বিভিন্ন পণ্যের ৬৮টি কারখানা চালু আছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সড়ক, নৌ ও রেলপথে খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা যায়। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও শ্রমিকের সহজলভ্যতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরীতে প্লটের চাহিদা বেড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সময়েও সম্প্রসারণ না হওয়ায় শিল্পনগরীর বিদ্যমান কারখানাগুলোর আকার যেমন বড় করা যাচ্ছে না, তেমনই নতুন প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে না। তবে সম্প্রতি জেলার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা মৌজায় নতুন আরেকটি শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেটি ১০০ একর বা তার বেশি জায়গাজুড়ে হতে পারে। যদিও সেই উদ্যোগ এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) অধীনে ১৯৮৭-৯৮ সালে নন্দপুর এলাকায় ২১.৯৮ একর জায়গায় শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। এ নগরীতে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘এস’ ক্যাটাগরির ১৩৮টি প্লট রয়েছে। সবকটি প্লটই লিজ দেওয়া আছে ব্যবসায়ীদের কাছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্লটগুলোর আয়তন ৪৫০০ স্কয়ার ফিট এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির প্লটগুলো ৩০০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের। আর ‘এস’ ক্যাটাগরির প্লটগুলোর আকার একেকটি একেক রকম। শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ কারখানা মালিকদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতি স্কয়ার ফিটের বিপরীতে বাৎসরিক ৩.৫০ টাকা করে পেয়ে থাকে। মূলত এটিই শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের আয়। বর্তমানে শিল্পনগরীতে ১৭টি মেটাল কারখানা, ৮টি ফ্লাওয়ার মিল, ৩টি সাবান, ৩টি সোডিয়াম সিলিকেট ও ৫টি বেকারি এবং একটি তারকাঁটাসহ বিভিন্ন পণ্যের কারখানা আছে। কারখানাগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। বর্তমানে ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে উৎপাদিত আটা-ময়দা ও মেটাল কারখানায় উৎপাদিত হাড়ি-পাতিলসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মেটাল কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল তৈরির কারখানাও রয়েছে শিল্পনগরীতে। এছাড়া সাবান, সোডিয়াম সিলিকেট ও তারকাঁটা কারখানাগুলোও ভালো ব্যবসা করছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি মেটাল কারখানা থেকে গড়ে প্রতি মাসে ৫০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকার পণ্য বাজারজাত হয়। ফ্লাওয়ার মিল থেকে মাসে বেচাকেনা হচ্ছে এক-দেড় কোটি টাকার আটা-ময়দা। সোডিয়াম সিলিকেট ও সাবানের প্রত্যেক কারখানা থেকে মাসে বাজারজাত হচ্ছে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার পণ্য। আর তাঁরকাটা কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার। বিসিক শিল্পনগরীতে প্লটের চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমন কিছু সমস্যাও আছে। এর মধ্যে শিল্পনগরীতে কোনো ব্যাংকের শাখা বা বুথ না থাকা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার দূরাবস্থা অন্যতম। ব্যাংকের শাখা বা বুথ না থাকার ফলে ব্যবসায়ীদেরকে জেলা শহরে গিয়ে লেনদেন করতে হয়। এজন্য জেলা শহরেও প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে আলাদা অফিস রাখতে হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কারখানাগুলোতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানি উত্তোলনের মেশিনটি কয়েক বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। এর ফলে পানি না পেয়ে মালিকরা নিজ উদ্যোগে তাদের কারখানায় পানি উত্তোলনের মেশিন বসিয়েছেন। তবে প্রতিবছরই শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষকে পানির বিল দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিসিক শিল্পনগরীর আপন মেজর ফ্লাওয়ার মিল ও কাশেম মেটালের স্বত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম আপন জানান, তার ফ্লাওয়ার মিল থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার আটা-ময়দা বেচাকেনা হয়। বর্তমানে শিল্পনগরীতে তার ৬টি প্লট রয়েছে। এগুলোতে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি। তবে মেটাল ব্যবসা আরও বড় করার জন্য তার নতুন প্লট প্রয়োজন। কিন্তু কোনো প্লটই খালি নেই। এছাড়া পানি না পেলেও ঠিকই প্রতি বছর পানির বিল দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। আরশি মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-ই রাব্বী জানান, বর্তমানে তার কারখানায় শুধুমাত্র গুনা উৎপাদিত হচ্ছে। কন্সট্রাকশন কাজের জন্য গুনার চাহিদা বেশি। প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকার গুনা বাজারজাত করা হয় বলে জানান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়িকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্লটের চাহিদা। বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীয়া আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্লটের জন্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পনগরী সম্প্রসারণের দাবি জানিয়ে আসছি।মো. জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিছু কিছু পণ্যের ব্যবসা খুব ভালো চলছে। সেজন্য প্লটের চাহিদা বেড়েছে। তবে কেনো শিল্পনগরী সম্প্রসারণ করা হয়নি সে বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতনরাই বলতে পারবেন। আমাদের সঙ্গেও প্লটের জন্য অনেক ব্যবসায়ী যোগাযোগ করেন। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও অবগত আছেন। এছাড়া নাসিরনগর উপজেলায় নতুন শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই আছে’। ‘পানির জন্য কোনো বিল নেওয়া হয় না। শুধুমাত্র পানির সংযোগ বিল নেওয়া হয়। আর ব্যাংকের শাখা কিংবা বুথ করার ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর আগ্রাহ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যদি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চান, তাহলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব’- উল্লেখ করেন রোকন উদ্দিন