জীবন মানে সংগ্রাম, সাধনা। সাধনার পথে আছে দুঃখ, ব্যথা। সে সব দুঃখকে উপহাস করে এগিয়ে যেতে হবে। হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাভ নেই। কারো দয়া পাওয়া যাবে হয়তো, সফলতার দেখা পাওয়া যাবে না। ফিলিপ সিডনি বলেছেন, জীবনের সব পথ যদি রুদ্ধ হয়, আমি একটা তৈরি করে নিতে পারি- পুরুষের জন্য মুক্তির পথ আছেই।
অবিশ্বাসী, পরমুখাপেক্ষী, বিশ্বাসহীন মানুষের জন্য মুক্তির পথ নেই। আল্লাহর নামে সহিষ্ণু হয়ে পরিশ্রম করো, তুমি ছোট হবে না। না খেয়েও মরবে না। বরং মুক্তির পথ খুলে যাবে। সন্দেহ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষ মারা যায়। সফলতার জন্য ভাগ্যের দিকে না তাকিয়ে, শক্তি-বুদ্ধি ব্যবহার করো। যে নিজের শক্তিকে মূল্যায়ন না করে অন্যের কাছে দয়া ভিক্ষা করে সে অপদার্থ। মানুষ কেন মানুষের কাছে ভিক্ষা করবে? আল্লাহ সবাইকে দু’টি হাত, দু’টি পা আর মুখের ভাষা দিয়েছেন।
কাজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি না হলে, আনন্দ অনুভব না করলে বিশেষ ফল হয় না। অনিচ্ছায় সারারাত পড়লে কোনো লাভ হবে না। শারীরিক শক্তি দিয়ে কাজ করা হয়, তবে মন তাতে সায় দেয়া লাগে। মন সায় না দিলে সে কাজ বেশি দূর এগোয় না। পরিশ্রমের সাথে কোনো আশা পোষণ করা মন্দ নয়- আশায় মানুষ পর্বত লঙ্ঘন করে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন।’ (সূরা তালাক-২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এটাও বলেছেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা-১০) এই আয়াতে আল্লাহ রিজিক তালাশ করতে বলেছেন। ভাগ্যের ওপর নিভর্র করে ঘরে বসে থাকতে বলেননি।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, পরকালীন জীবনে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যা দান করবেন আপনি তা অনুসন্ধান করুন। কিন্তু পার্থিব জীবনে আপনার ন্যায্য অংশের কথা ভুলে যাবেন না। (সূরা কাসাস-৭৭) নিজ হাতে কামাই-রোজগার ও হালাল উপার্জনের নির্দেশ কেবল সাধারণ মুসলমানদের দেয়া হয়নি। বরং যুগে যুগে সব নবী-রাসূল এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ রয়েছে, ‘হে রাসূল! পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করুন এবং নেককাজ করুন।’ (সূরা মুমিনুন-৫১) ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যুগে যুগে এ নির্দেশনা মোতাবেক নবী-রাসূলরা নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করেছেন। হজরত আদম আ: কৃষিকাজ ও তাঁতের কাজ করেছেন। হজরত ইদ্রিস আ: দর্জির কাজ করেছেন। হজরত হুদ ও ছালেহ আ: ব্যবসায়ী ছিলেন। হজরত দাউদ আ: নিজ হাতে উদরান্নের সংস্থান ও লোহা দিয়ে নানা ধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতেন। হজরত ইবরাহিম ও লুত আ: কৃষি পেশা গ্রহণ করেছিলেন। হজরত শোয়াইব আ: পশু বিচরণ করাতেন এবং তার দুধ বিক্রি করতেন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা: বকরি পালন ও ব্যবসায়-বাণিজ্য করেছিলেন।
নবী সা:-এর পরিবার ক্ষুধার তাড়নায় যখন ব্যাকুল, তখনো তিনি বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করতে যাননি। কাউকে নিজের অভাবের কথাও বলেননি। বরং শিক্ষা দিয়েছেন কাজ করার। ইসলামী শরিয়তে নিজ হাতে উপার্জিত খাবার গ্রহণে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সা: বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাবার থেকে উত্তম কোনো খাবার নেই’। আল্লাহর নবী দাউদ আ: নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন। (বুখারি-২০৭২)
মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজনীয়তা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে হালাল উপায়ে অর্থোপার্জনের যত পথ-পন্থা আছে রাসূল সা: সেগুলো অবলম্বনে উৎসাহিত করেছেন। কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুমিন যখন গাছ লাগায় অথবা কৃষিজ ফসল ফলায়, অতঃপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা পশু আহার করে সেটি তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি-২৩২০)
ব্যবসার ক্ষেত্রে মহানবী সা: বলেছেন, সত্যবাদিতা নিয়ে যারা ব্যবসায় পরিচালনা করবে তারা কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে উঠবেন। (তিরমিজি-১২০৯) হজরত আলী রা: বলেছেন, আমার রাত কাটে ইবাদতে আর দিন কাটে পরিশ্রমে। তুর্কি সম্র্রাট সেলিম সারাদিন কাজ করতেন। রাতে অল্পই ঘুমাতেন। সারারাত বসে তিনি পড়তেন। জীবনে কাজ ছাড়া অন্য কিছুতে তার আনন্দ ছিল না। অর্থ পাওয়ার লোভেই সবাই কাজ করে না। কাজ সবারই করতে হবে। সাহিত্য বিজ্ঞান এবং দেশের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করা দরকার।
যে জাতির মানুষ পরিশ্রম করে। যারা জ্ঞান-সাধনায় আনন্দ অনুভব করে, তারাই জগতের শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। কর্তব্য জ্ঞানহীন, নীতিজ্ঞানশূন্য আলো সে মানুষের স্থান জগতে সবার নিচেই হয়ে থাকে। তারা জগতে অবজ্ঞার ভার, অসম্মানের অগৌরব নিয়ে বেঁচে থাকে। জগতে ধন-সম্পদ জয় করতে হলে, জীবনের কল্যাণ লাভ করতে হলে, পরিশ্রম ও সাধনা চাই। লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম