বাজারে আসছে রংপুরের বিখ্যাত আম হাঁড়িভাঙ্গা। ক্রেতাদের কাছে আম পৌঁছে দিতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। এছাড়া, প্রথমবারের মতো এ আম বিদেশে রপ্তানি করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার ১৫ জুনের পর থেকে এ আম পাড়ার নির্দেশানা ছিলো। ফলে আজ থেকে আম পাড়ছেন বাগান মালিকরা। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। আবহাওয়া ভালো থাকলে আম বিক্রি করে এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে জানায় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের।
কৃষি বিভাগ আরও জানান, এবারই প্রথম দেশের গন্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, ভারত ও সিঙ্গাপুরে সরকারিভাবে রপ্তানি হবে মৌসুমি ফলের জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে থাকা রংপুরের ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম। আর এই রপ্তানির জন্য কৃষককে আগে থেকেই অর্থাৎ মুকুলের পর পরেই ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনেক আম চাষি বলছেন, এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে অধিকাংশ গাছের বোটা ঝরে পড়েছে। ভালো দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলে হিমাগার স্থাপনসহ পরিবহন সুবিধা ও ন্যায্য দাম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করার দাবি জানান তারা।
দুই দশক আগেও যেখানে দেখা যেত ধান খেত এখন সেসব স্থানে শুধুই চোখে পড়ে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান। অভাব-অনটন দূরে ঠেলে এখানকার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা হয়ে উঠেছে এই আম। যারা একসময় দিনমজুর ও শ্রমিকের কাজ করতেন, তারাও বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় হাঁড়িভাঙ্গা আমগাছ লাগিয়েছেন। আম চাষ করে অনেকেই বদলে ফেলেছেন ভাগ্য। রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্রেতাদের কাছে আম পৌঁছে দিতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ রেখেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান ম-ল বলেন, এ বছর জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। যা গতবারের তুলনায় পাঁচ হেক্টর বেশি। হাঁড়িভাঙ্গা আমের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে জেলায় ২৯ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। এছাড়া, অন্যসব আম মিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম ৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এ আম বিক্রি করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করার আশা করছেন এ জেলার আম চাষিরা। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, হাড়ি ভাঙা আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পরিবহন সুবিধাসহ নিরাপত্তার বিষয়টিও জোরদার করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এবার আম চাষ করেছে। তাদের উৎপাদিত আম আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রয়েরও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।