চলছে আষাঢ় মাস। এসেছে কদম ফুলের দিন। এই বর্ষায়-প্রকৃতির অনন্য অলঙ্কার কদম ফুল। কদম যেন বর্ষা ঋতুর প্রতীক। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের চরণ যেন দিনে দিনে আধুনিক জীবনে বর্ষা আবাহনের অনন্য ব্যঞ্জনায় পরিণত হয়েছে। যদিও সেই প্রথম কদম ফুল আজ আর বাদল দিনের জন্য অপেক্ষা করে না। দিনপঞ্জির হিসেবে বর্ষা আসার আগেই সে প্রস্তুত হয়ে থাকে বাদল দিনের আগমনী বারতা নিয়ে। আষাঢ়ে দেখা যায় গাছের পাতায়, টিনের চালে কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য। গ্রামে বর্ষা মানেই কর্দমাক্ত রাস্তা আর গাঁয়ের দস্যি ছেলেদের কদম ফুল নিয়ে হৈ-হুল্লোড়। পাপড়ি গুলো আলাদা করে একে অপরের গায়ে ছিটানো, কি যে আনন্দ উদ্দীপনা এই কদমফুল নিয়ে। টাঙ্গাইলসহ ঘাটাইল উপজেলার গ্রামাঞ্চলে দেখা মেলে কদম ফুলের এমন দৃশ্য। বৃষ্টি¯œাত কদম ফুলের ঘ্রাণ যেন স্বপ্নের রাজ্যে দোল খাচ্ছে। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি আর বৃষ্টির প্রতিটি রিমঝিম ফোঁটা যেন সবাইকে সম্মোহিত করছে। বর্ষার আগমনি বার্তা দিয়ে কদম ফুল যেন আপন মহিমায় সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মিষ্টি সুবাস। তৃষ্ণায় কাতর বৃক্ষরাজি বর্ষার অঝোর ধারায় ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। প্রাণীকুলও হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। কিংবা বৃষ্টির অঝোর ধারায় মেঘের বিছানা পেতে দেওয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ আজও হয়ে ওঠে স্মৃতিকাতর। কিন্তু বর্মানে চিরচেনা এই কদম গাছ তেমন একটা চোখে পড়ে না। ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কদম ফুল। বাংলার বিভিন্ন জেলায় এক সময় প্রচুর কদম গাছ চোখে পড়ত। যান্ত্রিক সভ্যতা ও নগরায়নের যুগে মানুষের সামান্য প্রয়োজনে কদম গাছকে তুচ্ছ মনে করে কেটে ফেলছে। কদম ছাড়া বর্ষা একরকম বেমানান। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।